Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ১২

 লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

আচমকা এলার্মের শব্দে ঘুম ছুটে যায় তটিনীর। ধরফরিয়ে উঠে বসে। বুকের ভিতর হৃদপিন্ড টা জোরে জোরে ওঠানামা করছে। তটিনী হাত বাড়িয়ে এলার্ম বন্ধ করে। মা বার বার বলে এতো জোরে এলার্ম সেট না করতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? তটিনী তো তোটিনীই। সেদিনের এক্সিডেন্ট এর পর এক মাস চলে গেছে, আর কখনও মোহ'র দেখা পেল না সে। তবুও খুব করে চায় একটিবার দেখা হোক তার সহদোরার সাথে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় ভার্সিটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মোহ'র দেখা আর পাওয়া যায় না। উষ্ণ ও তার এক্সিডেন্ট এর পর আর আসেনি। তাকেও দেখতে মন চায় তটিনীর। ষোড়শীর হৃদয়ে প্রেমের রঙ লাগিয়ে সে কী দেখা দিতে আর আসবেনা? জোড়ে একটা শ্বাস ছাড়ে তটিনী। তৎপর উঠে যায় বিছানা থেকে।
“তটিনী...। এই তটিনী..খেয়ে যা মা। তোর স্কুল আছে তো।”
মায়ের ডাকে আয়নার সামনে দাঁড়ানো কিশোরী জবাব দেয়,
“আসছি মা, তুমি খাবার রেডি রাখো।”
আরিফা বেগম প্রতুত্তর করেন না। শুধু মুচকি হাসেন। তৌফিক ইসলাম আরিফা বেগমের মুখের দিকে তাকান।
“উষ্ণ টা তো আর তটিনীকে পড়াতে এলো না।”
আরিফা বেগম চিন্তিত স্বরে উত্তর দেয়,
“হ্যাঁ, ছেলেটাকে একবার বলতে হবে।”
তৌফিক ইসলাম কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে সেখানে তটিনী চলে আসে। আর কিছু বলেন না তিনি।
তটিনী হাসিমুখে মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করে,
“কী নিয়ে কথা বলছিলে তোমরা?”
তৌফিক ইসলাম হেসে জবাব দেন,
“তোমাকে নিয়েই। সামনে তোমার পরীক্ষা না? সেটা নিয়ে।”
পরীক্ষার কথা শুনে তটিনীর চোখে মুখে অন্ধকার ভর করে। সামনে যে তার পরীক্ষা সেটা তার মাথায়ই নেই। নিশ্চিত এবার খাতায় তিন টা লাড্ডু পাবে সে। তটিনী মেকি হাসে। আরিফা বেগম তটিনীর দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই তটিনীর হাসি বন্ধ হয়ে যায়। তটিনী চুপচাপ খেয়ে স্কুলে চলে যায়।
তটিনী যেতেই আরিফা বেগম আর তৌফিক ইসলাম দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। অনেকদিন হয়ে গেলো, মোহ টাকে দেখেনা।
_________
হাসপাতালের সাধারন একটা কেবিনে শয্যা অবস্থায় শুয়ে আছে এক রমণী। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজের আস্তরণ। ব্যান্ডেজ এর এক পাশে গোল হয়ে রক্ত লেগে আছে। হাতে ক্যানোলা। বেডের পাশে নির্বাক হয়ে বসে আছে প্রভা ও শাওন। কাল রাতে বাসায় ফিরতে গিয়ে এক ময়লার স্তুপের উপর মোহকে পায় শাওন। রাস্তার এক পাশে মোহ'র ফোনটাও পায় সে। এমন মুহুর্তে প্রভা মোহকে কল করেছিল। যার কারণে প্রভাও এ ব্যাপারে খবর পায়। মোহ'র বাড়ির কারো সম্পর্কে কিছু জানা না থাকায় এবং ফোনেও তেমন কিছু না পাওয়ায় প্রভা এবং শাওন কেউই মোহকে একা রেখে যায় নি। রাত থেকে এখানেই আছে। এর ভিতর প্রহরও এসেছিল প্রভা কে দিতে। মোহ'র আহত চেহারা দেখে আর থাকার সাহস পায় নি।
.
বেশ কিছুক্ষন পর মোহ'র জ্ঞ্বান আসে। প্রভা মোহ'র বেডের পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। মোহ'র আকস্মিক চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় তার। প্রভা আবিষ্কার করে মোহ কেমন যেন পাগলের মতো আচরণ করছে। অকারণে চিৎকার করছে, জিনিসপত্র ভাংচুর করছে। এরুপ অবস্থা দেখে প্রভা ডাক্তারকে ডেকে আনে। আবারো ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয় মোহকে।
“ও এমন কেন করলো?” ডাক্তারের উদ্দ্যেশ্যে প্রশ্ন করে প্রভা।
ডাক্তার অকপটে জবাব দেয়,
“ভয় পেয়েছে। ভয়ংকর কিছু হয়েছে তার সাথে। শরীরে মারের দাগগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”
প্রভা চমকায়। এতক্ষণ মোহ'র পাশে থাকার পরও সে দাগগুলো দেখতে পায়নি। প্রভা তড়িঘড়ি করে মোহ'র শরীরের দাগগুলো দেখতে থাকে। ভালোই জখম হয়েছে। ডাক্তার প্রভা কে থামায়। এভাবে মোহ কে ধরলে তার কষ্ট হবে। ঘুমও ভেঙে যেতে পারে। প্রভাও থামে। দৌড়ে গিয়ে শাওনের সামনে দাঁড়ায়। শাওন প্রভাকে সেখানেদেখে অবাক হয়।
“কী হয়েছে প্রভা?”
প্রভা শাওনের কথার জবাবে কিছু বলে না। শুধু হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।
___________ Instagram
স্কুল ছুটি। বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে করতে হাঁটছে তটিনী। হটাৎ সামনে উষ্ণ কে দেখতে পায় সে। একটা দোকান থেকে সিগারেট কিনছে। তটিনী থামে। তাকে থামতে দেখে তার এক বান্ধবী বলে ওঠে,
“তটিনী? কী হয়েছে? থামলি কেন?”
তটিনীর চোখ উষ্ণের দিকে। উষ্ণ কে দেখতে দেখতেই সে বলে,
“তোরা যা। আমি পরে যাবো।”
তটিনীর বান্ধবীরা আর কথা বাড়ায় না। তারা চলে যায়। তটিনীও এগিয়ে যায় উষ্ণের দিকে। ততক্ষণে উষ্ণ একটা সিগারেট ধরিয়ে খাওয়া শুরু করেছে। তা দেখে তটিনী একমনে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
“এই লোক সিগারেটও খায়?” নিজ মনেই হাসে তটিনী। সিগারেট পছন্দ না তার, তবুও উষ্ণ কে এই রুপে দেখে তার মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।

এতক্ষনে উষ্ণের চোখেও তটিনীকে ধরা পড়েছে। কথা বলতে চায় না বলে উষ্ণ আর সেখানে দাঁড়ায় না। উলটো পথে হাটা ধরে। যা দেখে তটিনীর চোখে অশ্রুদের ভীর জমা হয়। তটিনীর কিশোরী হৃদয় কে ভীষনভাবে আঘাত করে এই লোক। সে কী বোঝে না তটিনীকে? তটিনী খেয়াল করে আকাশটাও কাঁদছে। ঝিরিঝিরি বর্ষন শুরু হয়েছে..। তটিনী এক পলক হেঁটে যাওয়া উষ্ণ কে দেখে। লোকটা ভিজে যাচ্ছে, তবুও হেঁটেই চলেছে...।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu