লেখিকাঃ ফাতেহাতুন নিলা
**********
রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয় ফ্লোরে পাশাপাশি টেবিলে শ্রেয়া-মেহরাব,সায়ান-মেঘলা, সাইফ-নিদ্রিতা বসে আছে। বাটি আর চামচের সংঘর্ষের টুংটাং আওয়াজ ব্যতীত আর কোনো শব্দ নেই। তাদের থেকে আরেকটু দূরে থাকা টেবিলগুলো থেকে মানুষের গুনগুন কথা বলার শব্দ আসছে। কিন্তু এই শব্দ কোনো প্রভাব ফেলছে না তাদের ওপর।দেখে শুধু এটাই মনে হচ্ছে এই তিন টেবিলে উপস্থিত থাকা প্রত্যেক সদস্যদের একটাই কাজ শুধু খাবার খাওয়া। কিন্তু এই চুপ থাকাটা আর বেশিক্ষণ টিকতে দিল না শ্রেয়া। নিরবতা ভেঙে শ্রেয়া বলল,,
~ মেহরাব আমাদের খাবার শেষ করার পর কী করা উচিত?
কথাটি বলেই শ্রেয়া মেহরাবের দিকে তাকাই উওরের আাশায়।কিন্তু মেহরাবের গা ছাড়া ভাব দেখে পুনরায় শ্রেয়া বলে,
~মেহরাব আমাদের কী তারপর কোথাও ঘুরতে যাওয়া উচিত নাকি অফিসে।
শ্রেয়ার কথায় মেহরাব এবার শ্রেয়ার দিকে তাকিয় তারপর নজর ঘুরিয়ে পাশের টেবিলে থাকা তার প্রেয়শী নিদ্রিতার দিকে তাকাই। যে কিনা একমনে শুধু খাবার খেয়েই যাচ্ছে। কারো একজনের দুটি চোখ যে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে তাকে তার কোনো খেয়ালই নেই।এদিকে মেহরাবকে নিদ্রিতার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রেয়া রাগে পাশে থাকা পানির গ্লাসটাকে চেপে ধরে। এদিকে এদের দুইজনের কাহিনি সায়ান আগে থেকেই নিশ্চুপ হয়ে দেখছিল। শ্রেয়াকে জোরে পানির গ্লাস টা ধরতে দেখে মনে মনে শয়তানি বুদ্ধি এটে পাশের টেবিল থেকে একটু জোরেই বলে সায়ান,,
~ কি করছ এসব শ্রেয়া, গ্লাসটা ভেঙে যাবে তো এত জোড়ে কেও চেপে ধরে। একজনের প্রতি রাগ অন্য একটা নিরীহ জড় বস্তুর ওপর দেখানো কি ঠিক শ্রেয়া৷
কথাটি বলেই এক ব্রু উঁচু করে তাকায়।এদিকে হুট করে এমন সায়ানের কথায় শ্রেয়া থতমত খেয়ে যায়।উপস্থিত থাকা সবাই খাবার বন্ধ করে শ্রেয়ার দিকে তাকাই। সবার থাকানো দেখে শ্রেয়া ঘাবড়ে গিয়ে বলতে থাকে,
~ক কই, আমিতো জাস্ট ধরলাম পানি খাব বলে এইযে। কথাটি বলেই শ্রেয়া গ্লাসের সম্পূর্ণ পানি ঢকঢক করে খাওয়া শুরু করল।
~কিন্তু আমি তো দেখলাম তুমি জোরে চেপে ধরেছ।আহারে বেচারাটা।
বলেই সায়ান ছোট বাচ্চাদের মতো করে ঠোঁট উল্টায়। তা দেখে মেঘলা ফিক করে হেসে ওঠে।মেঘলার হুট করে হাসির শব্দে এবার সবার নজর পড়ে মেঘলার উপরে।তা দেখে মেঘলা তার ঠোঁট দুটির উপর আঙুল চেপে ধরে।
~ সরি, আসলে উনি মানে সায়ান ভাইয়ার কথা বলার ধরন দেখে আমার হাসি পেয়ে গেছে।
~ ছেহ ভাই, এই মেয়ে আমি তোমার ভাই হয় কেমনে? ভাই ভাই করবে না একদম। দুনিয়াতে আমার বোনের অভাব নাই শুধু একটা বউয়ের অভাব।ভাই না ডেকে পারলে জামাই বলে ডাক। নয়তো তোমার বলা 'উনি' এটা বলেও ডাকতে পার।আরেক বার ভাই বললে সোজা কারাগারে বন্দী করে রেখে দিব।
~ আমার জানামতে ভাইয়ের বন্ধু সম্পর্কে ভাই হয়।
~ কিন্তু আমি তোমার ভাই লাগি না। তাছাড়া ভাইয়ের বন্ধু ভাই হয় এটাও মানি না আমি।
~কিছুক্ষন আগে যেই যায়গা চুপচাপ ছিল সেই জায়গা এখন হয়চয়ে পূর্ণ হয়ে গেল। কথাটি বলেই নিদ্রিতা খাবারে মনোযোগ দেয়।
নিদ্রিতার বলা এই বাক্যে সাইফ ফিরে তাকাই তার দিকে।
~ ঠিক বলেছ।
~হুম। কিন্তু শ্রেয়া আপু মেহরাব ভাইকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছিল।মেহরাব ভাই এখনো তার উওর দেয়নি কেনো?
নিদ্রিতার কথাটা শেষ হবার সাথে সাথে মেহরাব সবার দিকে একবার নজর ভুলিয়ে বলতে থাকে,
~ চুপচাপ সবার খাবার শেষ করে আগের মতো গাড়িতে বসবে।কোনো প্রকার ঝামেলা যেন না হয়।যদি কোনো প্রকার ঝামেলা করার চিন্তা কারো মাথায় থাকে আর চেষ্টা কর তাহলে তাকে গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে দিব।মাথায় রেখ কথাটা।আমার দিকে না তাকিয়ে খাবার শেষ কর তারাতাড়ি।
ধমকে বলে ওঠে শেষর কথাটা।মেহরাবের ধমক খেয়ে আর কেও কথা বলল না। সবাই মাথা নিচু করে চুপচাপ খাবার খেতে লাগল।
*★*Instagram
~একমাত্র শালি আমার মিসেস মুনিরা চৌধুরী কেমন আছ তুমি?
ফোনের ওপাশের কন্ঠটা চিনতে সময় লাগেনি মিসেস মুনিরা চৌধুরীর। তার একমাএ বোনের জামাই। কিসের জন্য ফোনটা করেছে তাও ভালো করে জানেন তিনি।
~ কি হলো মুনিরা কিছু বলছ না যে? আমার কথাটা কি শুনতে পাচ্ছ না মুনিরা।
~ হুম, বলেন।
~ তোমার ছেলেকে কি বলেছিলে কথাটা?
~ না
~ কেন? যাইহোক আজকে রাতের মধ্যে জানাও।সামনের মাসেই শুভ কাজটা শেষ করতে চাইছি। কালকে এসে পাকা কথা শেষ করব।
~ মেহরাব রাজি না হলে কিন্তু মেহরাবের বাবা রাজি হবে না।
~ এটা আমার দেখার বিষয় না। তোমার ছেলেকে যেভাবে পার রাজি করাও।মোট কথা আমার রাজি চাই। এখন রাখি।
মনিরুল ইসলাম কলটা রাখার সাথে সাথেই মুনিরা চৌধুরী মেহরাবের কাছে কল করেন। একবার দুইবার রিং বাজার পর মেহরাব কল ধরে।
~ কিছু বলবে আম্মু!
~ হুম, সন্ধ্যার মধ্যে তোমাকে বাড়িতে দেখতে চাই মেহরাব।
~ কিছু প্রয়োজন।
~ আসলেই জানতে পারবে। এখন রাখছি। সাবধানে থাকবে।
বলেই মুনিরা চৌধুরী ফোন রেখে দেয়।
~কে ফোন দিয়েছিল মেহরাব?
সায়ানের কথায় মেহরাব পিছন ফিরে তাকাই তার দিকে।
~ আম্মু দিয়েছে। বলেছে সন্ধ্যার মধ্যে বাড়িতে উপস্থিত থাকতে।
~ এখন কোথায় যাবি?
~শপিং মহলে কিছু কেনা কাটা করতে হবে।
~ হুম চল।
দুইজন তাদের গাড়িতে বসে পড়ে।গাড়িতে ওঠেই মেহরাব একবার নিদ্রিতার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানোর দিকে মন দেয়। আর ভাবতে থাকে,,
" কেন জানি মনে হচ্ছে কোনো কিছু একটা হারিয়ে ফেলব। বুকটা যে বার বার ধকধক করে কিছু জানান দিচ্ছে। কিন্তু আমি যে বুঝতে পারছি না।কোনো ভাবে কি আমি নিদ্রিতা কে হারিয়ে ফেলব। না না এটা হবে না কখনো। এই কথাটা ভাবতেই যে আমার সমস্ত শরীর শিউরে উঠছে।এটা হতে দেওয়া যাবে না। "
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মেহরাব পুনরায় নিদ্রিতার দিকে তাকায়। যার দুটি চোখ গাড়ির জানালা ভেদ করে বাহিরের যানজট রাস্তা দেখতে ব্যস্ত।একজোড়া চোখ যে একরাশ হারানোর ভয় নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই নিদ্রিতার।
0 Comments