লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা
নিস্তব্ধ বিকালে বিশাল এক বট গাছের তলায় বসে নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়ছে এক পুরুষ। চোখজোড়া তার আকাশের দিকে নিবদ্ধ। কালো মেঘ জমেছে আকাশে। পুরুষটির পরণে সাধারণ একটা কালো টি-শার্ট আর একটা সাধারণ প্যান্ট। হাতে সিগারেট। পড়ন্ত বিকালে এমন এক পরিপূর্ণ পুরুষকে দেখে প্রেমে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তেমনই বটবৃক্ষের পাশ দিয়ে যাওয়া সরু রাস্তা দিয়ে হেটে চলা তটিনীর চোখ পড়ে পুরুষটির দিকে। তটিনী একা ছিল না। পাশে তার তিন বান্ধবী দিয়া, রিম আর মায়মুনা। একা থাকতে বিরক্ত লাগছিল বলে মা বাবাকে কোনোমতে রাজি করিয়ে তিন বান্ধবীর সাথে এদিকটায় ঘুরতে এসেছে তটিনী। যদিও বটবৃক্ষকে সাক্ষাৎ করার আরও একটা কারণ ছিল। মায়ের কাছে শুনেছে উষ্ণের বাড়ি নাকি এই দিকে। তাই প্রেমিক পুরুষকে এক পলক দেখার বাসনায় কিশোরীর ঘুরতে আসা। তটিনীকে একভাবে উষ্ণের পানে চেয়ে থাকতে দেখে তার বান্ধবী মায়মুনা তটিনীকে ধাক্কা দেয়। আচমকা ধাক্কায় তটিনী বিরক্ত হয়। কপাল কুঁচকে তাকায় মায়মুনার পানে।
“কী হয়েছে? এভাবে ঠেলাঠেলি করছিস কেন?”
তটিনীর ঝাঝালো কণ্ঠ শুনে মায়মুনা আরো ঝাঝালো কণ্ঠে ঝাঝালো কথা ছুড়ে দেয় তটিনীর উদ্দেশ্যে।
“গাঞ্জাখোর টাকে এভাবে দেখার কী আছে?”
উষ্ণকে এভাবে বলায় গা জলে ওঠে তটিনীর। আঙুল উচিয়ে মায়মুনার সাথে তর্কে লেগে পড়ে। এমন ভয়ানক অবস্থা দেখে রিম এবং দিয়া ওদের থামায়।
ফোঁসফোঁস করছে তটিনী। তার এখন ইচ্ছে করছে মায়মুনাকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে। কত্ত বড় সাহস তার উষ্ণকে বাজে কথা বলে।
এসব ততক্ষণে অদূরে বটবৃক্ষের তলায় বসে থাকা উষ্ণের চোখে পড়ে গেছে। এমন সময় এখানে তটিনীকে দেখে যথেষ্ট অবাক হয় সে। এখানে কেন এলো সে? তাও এই সন্ধ্যার আগমুহুর্তে। পাশে থাকা বান্ধবীদের সাথে তটিনীকে ঝগড়া করতে দেখে উষ্ণের চিন্তা বাড়ে। উষ্ণের ভাবার মাঝেই তটিনী ছুটে এসে উষ্ণের পাশে বসে পড়ে। যা দেখে তার বান্ধবীদের মুখ হা হয়ে যায়। উষ্ণ তখনও বোঝেনি কি হয়েছে। পাশে তটিনীকে বসে থাকতে দেখে চমকায় সে। কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“এখানে এসেছো কেন?”
তটিনী মুখ ফোলায়। উষ্ণের দিকে প্রেমাত্নক চাহনি নিক্ষেপ করে।
“এসেছি বলে বিরক্ত হয়েছেন?”
উষ্ণ জোরে শ্বাস ছাড়ে। আপাতত তটিনী আর তার বান্ধবীদের এখান থেকে বিদায় করতে পারলেই বাঁচা যায়।
“সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে যাও।”
তটিনী দৃষ্টি ফেরায়। চেহারায় একরাশ অভিমান এসে ভর করে।
“আপনার এলাকায় এসেছি। আপ্যায়ন করবেন না?”
উষ্ণ তার ভ্রুযুগল কুঁচকায়।
“কী বলতে চাচ্ছো?”
উষ্ণ তার কথা বুঝতে চাচ্ছে না দেখে তটিনী মাথা নিচু করে। কালো মেঘ এসে জমা হয়েছে তার চেহারায়। মুখে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে বলে,
“কিছু না। আমি চলে যাচ্ছি। আর মা বলেছে কাল থেকে পড়াতে যেতে।”
উষ্ণ হাসি ফেরত দেয়। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“ঠিকাছে, আমি যাবো। একজন বাড়ি ফিরে যাও।”
তটিনী কিছু না বলেই পিছু হাঁটে। সাথে তার বান্ধবীরাও। উষ্ণ পড়াতে যাবে শুনে যতটা না তটিনীর মন উৎফুল্ল হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি মন অন্ধকার হয়ে যায় যখন সে বোঝে উষ্ণ তাকে পছন্দ করে না।
_____________Threads
মোহ এখন একটু শান্ত হয়েছে। ডাক্তার বলেছে সে এখন ট্রমায় আছে। প্রভা এবং শাওন এসব দেখে বেশ চিন্তিত। মোহ'র এই অবস্থা দেখে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছে না। যদি মোহ আবারো পাগলামি করে। প্রভা মোহ'র পাশে গিয়ে বসে। একটু পর প্রহর তাকে নিতে আসবে। মুখে একটু হাসি ঝুলিয়ে মোহ'র দিকে তাকায় সে। মোহ'ও হাসে। তারপর আবার আগের মতো হয়ে যায় তার আদল। প্রভা কিছু বলতেই যাবে তার আগে মোহ বলে ওঠে,
“আমার সাথে কী হয়েছে তা শুনতে চাও?”
প্রভা নির্বাক হয়ে যায়। মোহ কেবলমাত্র কী বললো? সে সবটা বলবে..! প্রভা উৎফুল্ল নয়নে তাকায়।
“কী হয়েছে বলো..। প্লিজ মোহ, আমাদের সবটা জানা দরকার।”
0 Comments