লেখিকাঃ সাদিয়া আকতার
ঘরটা অন্ধকার।
আরাম কেদারায় আধশোয়া
হয়ে হাতের এভিডেন্স প্যাকেট টার দিকে মন দিয়ে কিছু দেখছে আলভি। কৃষ্ণচূড়া গাছের বেশ
পিছনে গোলাপ গাছে এই শার্টের টুকরো টা পায় সে। বোঝাই যাচ্ছে কেউ তো ছিলো সেখানে কিন্তু
কে?
ডেস্কে রাখা ফোন
টা বেজে ওঠায় চিন্তায় ছেদ পরলো, স্ক্রিনে ভেসে থাকা নাম্ববার দেখে এক মুহুর্ত কিছু
একটা ভেবে রিসিভ করলো আলভি,
: জ্বি ইন্সপেক্টর
বাবু,,, বলুন,,,
: শুভ সন্ধ্যা আলভি
বাবু!,,, ওই ক্যামিক্যাল শপের খোজ পেয়েছি,,,
: হুমহ,,, কোথায়?
: হাসেমপুর,,,এখান
থেকে প্রায় চল্লিশ কি.লো. দূরে,,,
: আজিব!,,,তারপর??
: একটা অদ্ভুত ঘটনা
জানালো তারা,,,মনেহয় তখনি কন্টেইনার চুরি গেছে,,,
: কি ঘটনা?
: ওই শপের রেজিস্ট্রার
খাতার গত তিন মাসের কপি চেয়ে পাঠিয়েছিলাম,,,, এর মধ্যে তারা দু'বার ভিন্ন দু'জায়গায়
ফ্লোরিক এসিড ডেলিভারি দেয়,,, কিন্তু,,,,
: কিন্তু কি??,,,
: কিন্তু তাদের বক্তব্য
শেষ যেবার ডেলিভারিতে পাঠানো হয় কন্টেইনার গুলো,, রাস্তা থেকেই একটা কিভাবে যেন চুরি
যায়,,,
: হুম,,হুম,,,কোথায়
যাচ্ছিলো এটা?
: হাসেমপুরের একটি
কেমিস্ট্রি ল্যাবে,,,,
: জিডি করেনি?
: হ্যাঁ হ্যাঁ করেছে,,,সেই
কপিও পাঠিয়েছে,,,
: আচ্ছা,,আপনি দয়া
করে আমাকে কপি গুলো সেন্ড করবেন,,,দেখছি বাকি টা,,,
: আচ্ছা বাবু,,,
: আর ফরেনসিক রিপোর্ট,,,
: সাতটায় মেইল আসার
কথা,,আর পনেরো মিনিট পরেই,,,
: ইন্সপেক্টর বাবু,,,
আমি থানায় আসছি,,,আমার পারমিশন লেটার টা নিতাম,,,
: হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন,,,আদাব,,
: আদাব,,,
চিন্তিত মনে ফোন
রেখে ছাদের দিকে তাকিয়ে বিছিন্ন সূত্র গুলো এক ছকে মিলানো চেষ্টা করছিলো আলভি এ সময়
রবিন আসে তার রুমে
: কি ব্যাপার! সেই
দুপুর থেকে দেখছি রুমে?,,,ঠিক আছো?
: হুম্মম,,,আমিতো
ঠিক আছি কিন্তু,,,সূত্র গুলো ঠিক নেই,,,
: আচ্ছা,,, ওই বাগানে
ইনভেস্টিগেশনের সময় যে বেশ খুশি দেখলাম তোমাকে,,,
এভিডেন্স প্যকেটের
দিকে ইশারা করে বলে "ওটা ,,পেয়েছি,,,কারো উপস্থিতির নিশানা,,,গাছের বেশ কিছু ডালও
ভাঙ্গা ছিলো,,,,
: আচ্ছা,,,আর ওই
এসিড কোথাকার?
: হাশেমপুর,,,
: তো,,এটা এখানে
আসলো কিভাবে?!!,,
: রহস্য,,,রহস্য,,
: আরে হেয়ালি কর
না,,,কিছু কি বুঝেছো?
: উম??,,,হুম,,দেখি,,,,
আচ্ছা আমি একটু বেরোচ্ছি,,,
: এখন আবার কোথায়
যাবে?
: কেন যাওয়া যাবে
না,,,,
: না,,,মানে,,এখন??
: হুম,,ফরেনসিক রিপোর্ট
ও এসে যাবে তাই,,,,একটু যাই,,, কাজ আছে,,
: বেশ তো আমিও তৈরি,,
: হুম,,চল,,,,
দু'জনে বাইকে চড়ে
বেরিয়ে পড়লো। রবিন জানে আলভি তদন্তে সময় মাঝে সাঝেই এমন অদ্ভুত আচরণ করে। এখন অভস্ত
হয়ে গেছে বটে। যাবার পথে থানায় খনিক থেমে চট জলদি ইন্সপেক্টর বাবু থেকে একটা কাগজ নিয়ে
ফের যাত্রা শুরু করলো।
প্রায় ঘন্টা খানেক
পর তারা এসে থামলো এক বাড়ির সামনে।
রবিন বিস্ময়ে বললো
" আলভি,,,এ কেমন হেয়ালি!?"
: কেন?,,,,কি হয়েছে?
: আমাকে একটাবার
বলা যেত না?
: শ,,শ,,শ,,,,অন্য
কথা নয়,,,শোন তোমার হেল্প লাগতে পারে,,,,
বলে কলিং বেলে চাপ
দিতেই এক মাঝ বয়সি লোক ভিতর থেকে আওয়াজ দিলো " কাকে চাই?"
: মি. ফারহাদ কি
বাসায় আছেন?
: জ্বি স্যার বাড়িতেই
আছেন,,
: আপনার স্যার কে
বলুন ডিটেকটিভ আলভি মাহমুদ এসেছে,,,,
: একটু অপেক্ষা করবেন
স্যার,,,
ক'টা বাজে সেটা দেখতে
ফোনের স্ক্রীন অন করলে আলভি লক্ষ্য করে একটি নোটিফিকেশন এসেছে, বাইকে ছিলো তাই বুঝতে
পারে নি। তড়িঘড়ি চেক করতেই দেখে ফারজানার ফরেনসিক রিপোর্টের ডিটেইলস দেয়া।
নীচুস্বরে রবিন কে
ডাক দেয়
: রবিন!,,, এই রবিন!,,,দেখ
এটা,,, ফারজানার,,,
রবিন চেক করে কিছু
বলতেই যাবে এর মধ্যে ফারহাদ সাহেব নিজে চলে এসেছেন " মি. আলভি,,, আসুন আপনারা,,,
ভিতরে আসুন,,,"
সকালে তারা যেই রুমে
এসে বসেছিল এখন আবার সেই রুমেই প্রবেশ করলো। ওদের উদ্দেশ্যে ফারহাদ সাহেব বললেন
"জ্বি বলুন,,,আ,,,কি ব্যাপার,,, "
: আপনাদের বাসায়
এখন অনেক মানুষ নাকি?
: জ্বি??,,,,জ্বি
এসেছে কয়েকজন,, আসলে মেয়ের ঘটনা শুনার পরে,,,
: আচ্ছা,,,আমরা আপনার
মেয়ের রুম একবার দেখতে চাই,,
: কিন্তু কেন?,,,
: কোন ক্লু তো পেতে
পারি,,,
: ওহ!! তারমানে এখন
আপনারাও আমার মেয়ের রুমের ইনভেস্টিগেশন করবেন??
: দেখুন! আপনি ভুল
বুঝছেন,,,আসলে,,,
: থাক!! আর বোঝাতে
হবেনা!!,,, মেয়ে টা আমার এই পৃথিবীতে নেই,,,সারাজীবন যেই মেয়ে কে নিজেরা ভালো মন্দ
জেনে বড় করেছি,, আজ তার এই অবস্থার জন্য আমার সেই মেয়ে কেই অপবাদ দেয়া হচ্ছে,,,এখনো
মেয়েটার দাফন হয়নি পর্যন্ত অথচ লোক মুখে ঝড় উঠেছে মেয়ে নাকি আমার ভালো ছিলো না,,,,আ,,,আ,,,আ,,,,,,
, আবার ডুকরে কেদে ওঠেন ফারহাদ সাহেব।
রবিন এতখন চুপ থাকলেও
এবার ফারহাদ সাহেবের কাধে হাত রেখে পাশে বসে বলে
: দেখুন মি. ফারহাদ!
আমারও একটা মেয়ে আছে,,,,আমিও মেয়ের বাবা,,,আমি বুঝি আপনার কষ্ট টা,,,কিন্তু আপনাকে
যে এখন শক্ত থাকতে হবে!!!,,,,,
: কিভাবে?,,, মাত্র
সতেরো বছর,,,ওই টুকু একটা মেয়ে কেন সুইসাইড করবে,,,
: কে বলেছে আপনাকে
মেয়ে সুইসাইড করেছে??
হতাশ কন্ঠে ফারহাদ
সাহেব বললেন "নিজের চোখের সামনেই তো দেখেছি,, শেষ হয়ে যাচ্ছিলো,,, ছটফট করেতে
করতে,,,,"
: ওকে খু**ন করা
হয়েছে মি. ফারহাদ!!
রবিনের এই কথায় আলভি
এবং ফারহাদ দু'জনেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।
: হ্যাঁ আলভি!,,,
ফরেনসিক রিপোর্টে যেই মেডিসিন টা ফারজানার বডি তে পাওয়া গেছে,,,,ওটা মূলত হেপনোটাইজ
করার জন্য ইউজ করা হয়,,,,
: আমার মেয়ে কে কেউ
হেপনোটাইজ করেছিলো!!!!
: হ্যাঁ,,,, আর এই
মেডিসিন টা খাবারের মাধ্যমে দিতে হয়,,,
: খাবার!!,,,মানে,,,
: দেখুন মি.ফারহাদ
আমি নিজেও এরকম কিছুই অনুমান করেছিলাম,,,আসলে এখানে অনেক প্রশ্ন আছে,,,,উত্তর পেয়ে
গেলে নিশ্চয় সব বোঝা যাবে,,,,,বললো আলভি
: ঠিক আছে,,, তাহলে
আমার মেয়ে কে যে খু**ন করেছে তাকে খুজুন!!,,,,আমি নিজে তাকে খু**ন করবো!!!
: না,,মোটেও না,,,এক
অন্যায় দমনের জন্য অন্য অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয়া যায় না,,,আপনি বরং আমাদের সর্বাত্মক
সাহায্য করুন,,,খুনি কে আইন শাস্তি দিবে,,,,ভরসা রাখুন,,,
: চলুন,,,মেয়ের ঘর
টা দেখিয়ে দিচ্ছি,,,,কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললেন মি. ফারহাদ।
সিড়ি বেয়ে দোতলার
করিডরের ঠিক ডান দিকের মাঝের রুম টা ফারজানার। "আসুন,,,এই যে এটা তে আমার মামনি
থাকতো" বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার বাইরেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ওরা উনাকে আর জোর
না করে নিজেরাই ঘরে ঢুকে। মাঝারি পরিসরের ঘর, বিছানার চাদর টানটান, পরিপাটি করে সাজানো
পড়ার টেবিল, দেয়ালে কয়েকটা পেইন্টিং, গত রাতে মেয়েটি মনেহয় ঘুমোয় নি বরং নিজের শখের
রুম টা কে শেষ বারের মত সাজিয়ে রেখে গেছে।
আলভি পড়ার টেবিল
থেকে ফারজানার খাতা ডায়েরি নিয়ে তাতে লেখা গুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে
শুরু করে। রবিন পাশে বসে ফারজানার ল্যাপটপ অন করে ইন্টারনেট সাইট গুলো চেক করে তেমন
কিছু পায় না, তার পারসোনাল একাউন্ট ডিলিট দেয়া তবে এক ড্রাইভে একটি ছবি দেখে ভ্রু কোচকে
সেটাকে কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করে।
: এই আলভি!,,,
: হুম,,,
: দেখ,,,এটা,,, কোন
লোগো??,,,,চারটা হাত,,,এক জোড়া হাতে ডি(D) আরেক জোড়া হাতে টি (T) !!!!
: উম্মম,,,অথবা কোন
বিশেষ চিহ্ন,,,, আচ্ছা এটা কপি করতো,,
: হুম,,,
: এক মিনিট! তোমার
পায়ের কাছে বিনে ওটা কিসের প্যাকেট?,,,,
: কই,,,ওহ,,, চকলেটের,,,
বলেই চমকে আলভির দিকে তাকিয়ে আবার বলে " চকলেটের? ,,,মানে!!!,,"
: হুম্মম,,,তুমিও
দেখছি গোয়েন্দা সুলভ আচরণ করছো,,,হুম,,, নিয়ে নাও,,, বলে আলভি আবার তার কাজে মনোযোগ
দেয়।
এবার তার চোখ আটকায়
ডায়েরির একটি লাইনে, ঘটনার প্রায় ন'দিন আগে লেখা। আপন মনে মাথা দুলিয়ে বার কয়েক লেখা
টা পড়ে নেয়।
: এই রবিন!,,, চলো
কাজ হয়ে গেছে,,,
: হুম?,,,
: হুম,, চলো,,,তাড়াতাড়ি,,,,
মি. ফারহাদের বাড়ি
ত্যাগ করে ওরা আবার বাইক যাত্রা শুরু করে বরাবরের মতো এবারও ঠিকানা অজনা রবিনের।
ঘন্টা খানেক পরে
তারা পৌছে যায় গন্তব্যে।
: আরে,,,এবার এখানে
কেন?,,,বলে রবিন।
: ওহো রবিন!,,,মাঝে
মাঝে তুমি বড্ড বোকার মত কথা বলো,,,
: আচ্ছা এখন রাত
ক'টা বাজে?
: উম্ম,,,,এই দশটা,,,
: তো এত রাতে ল্যাবে
আমার কি কাজ?
: উফফ!! আবার সেই
বোকার মত কথা!,,,,
: মানে??,,,, ওহো!,,,
আচ্ছা,,, সে বললেই পারো,,,চলো,,,,
: হুম,,,তাড়াতাড়ি,,,,,
আসলে আলভি চাচ্ছিলো
এই কেসে কোন ক্লু পেলে, দ্রুত সেটা মিলিয়ে নেয়া তাই, সে রাত হলেও রবিন কে নিয়ে এসেছে
ওর ল্যাবে, ফারজানার সেই চকলেটের প্যাকেট গুলো টেস্ট করানোর জন্য। গার্ড কে অনুমতি
পত্র দেখানো হলে সে ভেতর ঢোকার ব্যবস্থা করে দেয়।
আলভি কে সব বুঝিয়ে
রবিন কাজে লেগে যায়। নীল বর্ণের তরল পদার্থ পনেরো মিনিট তাপ দিয়ে গরম করা হলো এরপরে
রবিন ইশারা করলে আলভি প্যাকেটে লেগে থাকা চকলেটের কিছু অংশ তরলের মধ্যে ছেড়ে দিলো।
দু'জনে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় অপেক্ষা করছে। ঠিক পাচ মিনিটের মাথায় হঠাৎ করে তরলের রঙ
পরিবর্তন হয়ে কালো বর্ণের হয়ে যায়। উচ্ছ্বসিত রবিন তুড়ি বাজিয়ে বলে
: দেখেছ!,,,এটা,,এটা
দিয়েই মেডিসিন টা দেয়া হয়েছে,,,,
: হুম,,, চকলেটে
কিভাবে দেয়া হলো,,,
: আশেপাশের দোকান
গুলোতে খোজ নিলে,,,,
: উম্মহ,,,সেটা কিভাবে
কত দোকান থেকেই তো কিনতে পারে,,,আচ্ছা,,,, মেডিসিন যেহেতু দেয়া হয়েছে,,,,তাহলে কেউ
তো ছিলো তাকে হেপনোটাইজ করতো,,, তাইনা?
: হ্যাঁ,,, এটা তো
সেই কাজের জন্যই,,,,
: আচ্ছা,,এ,,,একটা
ব্যাপার বলতো,,,,এই মেডিসিন কিভাবে কাজ করে?
: মনেকর ,,,,, তুমি
আমাকে বশ করতে চাচ্ছো তাহলে,,,, এই ধর বিশ ত্রিশ মিনিট আগে কোন খাবারে মিশিয়ে দিয়ে
দিবে,,,,
আলভি বিড়বিড় করে
বলে "বিশ,,,, ত্রিশ মিনিট আগে,,,,রুমের ভিতরেই চকলেট খাচ্ছে,,,,কে থাকবে রুমে?"
: এই আলভি! চলো রাত
হয়ে যাচ্ছে,,,
: হুম্মম,,,কন্টেইনারে
কিছু পাওয়া যায় নি না??
: নাহ,,,,শুধু ফারজানার
হাতের ছাপ,,,,
আলভি আর রবিন বেরিয়ে
আসে ল্যাব থেকে। এবার আলভি ড্রাইভ না করে রবিন কে চাবি এগিয়ে দেয়। পুরোটা রাস্তা আলভি
চুপচাপ ছিলো বাড়ি ফিরেও চলে যায় নিজের রুমে।
ফ্রেশ হয়ে টেবিল
ল্যাম্পের আলোতে কাগজের টুকরো টা তুলে ধরে আলভি।
"আসলাম,,,,অল্প
কিছু খাবার এনেছি,,,এসো,,,, খেয়ে নাও" বলে রবিন টেবিলের সাইডে খাবার ট্রে রাখে।
: রবিন!,,, দেখ তো
এটা,,,,কি বুঝ,,,,
কাগজ টি নিয়ে রবিন
কিছুটা শব্দ করে পড়ে--------
" কারো গায়ে
এসিড ঢেলে দিলে সে কি পরিমাণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে পারে!!!
পাপ মোচনের জন্য আমার আত্মা কে উৎসর্গ করবো। কেউ দায়ী থাকবে না"
: কি বুঝলে?
: ফারজানার লেখা?
: হুম
: আত্মা,,,কে,,,
উৎসর্গ,,,করবো,,,,মানে বেশ কিছু দিন আগের কথা,,,এখানে অতীতের কোন ঘটনা কে অনুশোচনা
করে লেখা এটা,,,,,কার সাথে এমন হয়েছিল,,,,এটা যদি বের করা যেত,,,,
: ফারজানার বাবা
কে কল দাও তো,,,,
: এত রাতে?
: মেয়ে মারা গেছে,,,
ঘুমায় নি নিশ্চয়,,, ট্রাই কর,,,জলদি,,
অগত্যা রবিন ফারহাদ
সাহেবের নাম্বার ডায়াল করে। বার দু'য়েক কল দেয়ার পরে মি.ফারহাদ রিসিভ করলেন,,,
: হ্যালো!!,,,,কে?
: আমি ডা. সাখাওয়াত
রবিন বলছি,,,
: ওহ আচ্ছা বলুন,,
: বাড়ির সবাই কেমন
আছেন?
: সবাই ঠিক আছে,,,সাফার
অবস্থাই ভালো না,,,,
: আসলে আমরা দু:খিত
বারবার আপনাদের ডিস্টার্ব করছি,,,,
: সমস্যা নেই,,,বলুন,,,,
: বলছি,,,,, ফারজানা
কি কখনো কাউকে এসিড মারা হয়েছে বা এমন কিছু সম্পর্কে জানিয়েছিলো আপনাদের??
: এসিড মারা?,,,,কই
নাতো,,,,
: একটু প্লিজ মনে
করুন,,,
: আচ্ছা আমি সাফা
কে জিজ্ঞেস করি,,,ও হয়ত জানে,,,,
: জ্বি,,,আমি কিছুক্ষণ
পরে কল দিচ্ছি।
রাতের খাবার শেষ
করে রবিন আবার কলে দেয় মি. ফারহাদ কে-
: জ্বি,,,মি. ফারহাদ,,,,
: জ্বি,,, আসলে এরকম
একটা ছোট্ট ঘটনা হয়েছিলো,,,, পাচুলিয়া শহরে যখন আমরা যাই,,,,আমার মনে ছিলোনা,,,
: ঠিক কি হয়েছিলো?
: ফারজানা একদিন
একা হোটেলের সামনে হাটছিলো তখন,,, এলাকার এক বখাটে ছেলে একটা মেয়ে কে এসিড ছুড়ে মারে,,,ওটা
দেখে ফারজানা অনেক ভয় পেয়েছিল,,,এরপর প্রায়ই নাকি ওর মা'কে ওই দিনের কথা বলত,,,,
: ওই মেয়েটার কি
অবস্থা??
: মেয়েটার তেমন কিছুই
হয় নি,, খুব সামান্য এসিড গায়ে ছুড়েছিলো,,,আসলে ছেলেটা মেয়ে টাকে বিয়ে করতে চাইতো তাই
ভয় দেখানোর জন্য এটা করেছিলো,,,,পরে মেয়ে টাকে বিয়েও করেছে,,,,
: আচ্ছা,,,অনেক ধন্যবাদ,,,
: বলছি,,, কিছু কি
জানা গেল,,,
: ইনভেস্টিগেশন চলছে,,,
চিন্তা করবেন না,,,আজ রাখছি,,,,,
এতক্ষণ ফোন কল লাউডস্পিকারে
থাকায় আলভি মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনছিলো। কল কেটে দেয়ার পরেও তার ভাবন্তরে পরিবর্তন
হলো না। সকালে রবিনের চেম্বারে যেতে হবে তাই সে বিদায় দিয়ে চলে যায়। কেমিক্যাল শপের
পাঠানো কপি গুলো কয়েক বার ক্রস চেক করতে একটা বিষয় আলভির সন্দেহ হয়। কাল অনেক কাজ করতে
হবে আর রাত জাগা ঠিক হবে না ভেবে আলভিও ঘুমাতে যায়।
-------------------
ভোর ৫টা।
তড়িঘড়ি উঠে নামায
পড়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নেয় আলভি। রবিন চা'য়ের টেবিলে অপেক্ষা করছিলো আলভির জন্য। ওকে
এভাবে তৈরি হয়ে বের হতে দেখে হকচকিয়ে বলে "কি ব্যাপার,,,, ক,,,কোথায় যাচ্ছ"
: কেসের একটা লিড
পেয়েছি,,,,,
: আরে,,,কোথায়,,,নাস্তা
তো কর,,
: না,,,,না,,,,সময়
নেই,,,,শোন ঝামেলা হলে কল দিয়ে জানাবো,,,
: আচ্ছা,,,, সাবধানে
যাও,,,,আমিও তাইলে ছুটি নিই,,
: না না,,, আমি জানাবো,,,
বলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়।
বেলা ১১টা, হাসেমপুর।
ঠিকানা দেখে আলভি
পৌছে যায় কেমিস্ট্রি শপে। ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানতে পারে তারা নিজেদের গাড়িতে
প্রোডাক্ট'স সাপ্লাই দিয়ে থাকে।
আলভি রেজিস্ট্রার
কপি দেখিয়ে জানতে চায় "এই যে মানিক,,,,এই কি এসিড কন্টেইনার গাড়ির ড্রাইভার ছিলো??,,,,,"
: হ্যাঁ এই ছেলে
টা,,, মানিক মুন্সি,,,,,বলে ম্যানেজার
: ওর পরিচয় পত্রের
কপি আছে আপনাদের?
: জ্বি একটু ওয়েট
করেন,,,,
কিছুক্ষণ খোজাখুজি
করে একটা বক্স থেকে মানিকের কাগজ পত্র বের করে আলভির সামনে দেয় ম্যানেজার। আলভি সেই
কাগজ মন দিয়ে দেখে ইন্সপেক্টর বাবুলাল কে ই-মেইল করে। ফোন দিয়ে জানায় এর সত্যতা যাচাই
করতে।
কথার ফাকে আলভি জানতে
চায় "ছেলেটা কবে থেকে কাজ করছে?"
: প্রায় ছ' বা সাত'মাস
আগে,,, আমাদেরই এক ড্রাইভার ওকে নিয়ে আসে,,, সম্পর্কে নাকি ওর কাকা হয় ,,,,
: তার নাম কি?
: জওহর আলী,,,,উনি
আমাদের অনেক পুরোনো ড্রাইভার,,,,,
আলভির ফোন টা বেজে
উঠে। ওপাশ থেকে কি বলা হয় সেটা বোঝা যায় না সে শুধু হ্যাঁ হুম বলে ফোন টা রেখে দেয়।
: বলছি ম্যানেজার
সাহেব আমি মানিকের সাথে একটু দেখা করতাম,,,,কখন পাওয়া যাবে?
: আসলে স্যার ও কিছুদিন
হলো আসছে না,,,,জওহর চাচা বললো সে নাকি অসুস্থ,,,,,
: অসুস্থ??,,,, জওহর
আলীর ঠিকানা টা দিন তো,,,,
: এই নিন স্যার!!!
: পরবর্তীতে কাউকে
কাজে নিলে তার তথ্য অবশ্যি যাচাই করে নিবেন,,,,
: জ্বি,,,জ্বি,,,স্যার,,,
ঠিকানা নিয়ে একটা
রিক্সা করে আলভি পৌছে যায় বস্তির মতো ছোট একটা পল্লিতে। লোকজন কে নাম বলে জানতে চাইলে
জওহর আলীর টিনসেড বাড়ি দেখিয়ে দেয়।
দরজায় করাঘাত করে
আলভি বলে "জওহর চাচা,,,বাড়ি আছেন?
: কে,,,,কে আপনি??
দরজা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে আছে বয়স্ক কিন্তু সুঠাম শরীরের এক পুরুষ। পরনে লুঙ্গি ও গেঞ্জি।
: চাচা,,,,আপনার
সাথে একটু কথা ছিলো,,,
: কে আপনি? কর্কশ
স্বরে জানতে চায়
: একটু পানি,,,ভিতরে
আসি??
: আসেন,,,, একটু
বিরক্ত হয়েই বলে
আলভি কে বসতে বলে
লোক টা ডাক দেয়
" খুশবু,,,,
এক গ্লাস পানি দিয়ে যা তো,,,,"
আনুমানিক ষোল সতেরো
বছরের এক কিশোরী মেয়ে পানি নিয়ে আসে।
আলভি একটু কৌতহলী
চোখে মেয়েটার দিকে তাকালে লোকটা আবার কর্কশ স্বরে বলে "ও আমার নাতিন,,,যা তুই
ঘরে যা,,,,"
আলভি চট করে বলে
বসে "মানিক কই,,,,ওকে তো দেখছি না,,,"
"মানিক"
নাম টা শুনে মেয়েটি চমকে একবার আলভির দিকে তাকিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়, বিষয় টা আলভির
দৃষ্টি এড়ায় না।
: কি হে মশাই,,,,কি
সমস্যা আপনার,,,আসার পর থেকে উল্টাপাল্টা বকছেন,,,,লোকটি এবার উত্তেজিত হয়ে যায়।
: উল্টাপাল্টা?,,,,,কই
না তো,,,
: মানিক বাড়ি নাই,,,,কাজে
গেছে,,,
: কি কাজে?
: মহা মুশকিলরে বাবা!!!,,,,ও
ড্রাইভার মানুষ এত বেলায় কেউ বাড়ি থাকে নাকি,,,,
: কই,,,, ওখানেও
ছিলো না তো,,,,
: অন্য কোথাও গেছে,,,,আমি
কি জানবো,,,এই,,,যান তো আপনি,, বেরিয়ে যান,,,,
এবার আলভি তার মুখের
ভাব পরিবর্তন করে দক্ষ গোয়েন্দার ভাবে গম্ভীর স্বরে বলে " তবে কি এই খু**নে আপনিও
জড়িয়ে আছেন জওহর আলী কাকা??"
: খ,,,,খু**ন,,,ক,,কিসের খু**ন,,,,কার খু**ন?
: তাহলে ভালোয় ভালোয়
বলছেন না কেন মানিক কোথায়,,,,,রাগত স্বরে বলে আলভি।
: আ আমি সত্যি বলছি
স্যার,,,,আমি কিচ্ছু জানিনা,,,বুঝতে পারছিনা আপনি কি বলছেন,,,,
: আপনি মনেহয় মানিকের
আসল কাকা নন তাইতো,,,,
: হ্যাঁ,,,,,হ্যাঁ
স্যার,,,আসলে সত্যি বলতে ওই ছেলে তো আমাকে এক প্রকার জিম্মি করে ওর কাকা বানিয়েছে,,,,
: বুঝলাম না,,,,
: এই,,, এইযে আমার
নাতিন,,, ও আমার খুব আপন,,,,আমার একটাই মেয়ে ছিলো ওর জন্মের পর মেয়েটা মারা যায় সেই
থেকে আমরাই ওকে পেলে পুষে বড় করছি,,,,আমার স্ত্রীও বছর তিনেক হলো গত হয়েছে,,,এখন আমারাই
দু'জন,,,,বেশ কিছু মাস আগে ওই মানিক নামের ছেলে টা আমার কাছে আসে,,,,বলে ড্রাইভারের
কাজ দিতে,,,আমি ওকে ঠিকানা দিই নিজে যেয়ে কথা বলতে কিন্তু সে রাজি হয় না,,,,শর্ত দেয়
আমাকে,,,,
: কি শর্ত?
: বলে ওর কাকা হতে
আর,,,,আর ওর যেদিন ইচ্ছা হবে আমার ডিউটি গুলাও ওই করে আসবে,,,,যেয়ে বলবে আমি নাকি অসুস্থ,,,,এসবে
রাজি না হলে আমার নাতির ক্ষতি করে দিবে,,,,, ও আমার সামনেই অনেক অসভ্যতামি করে আমাকে
ভয় দেখায়ছিলো,,,পরে আমি রাজি হই,,,,
: তারামানে শেষ যে
ডিউটি ও করেছিলো সেটাও কি আপনার করার কথা ছিলো??
: হ্যাঁ স্যার,,,,আর
যখন শুনি কন্টেইনার চুরি গেছে তখনই আমার ওরেই সন্দেহ হয় কিন্তু,,,,,
: কিন্তু কিছু বলতে
পারেন নি,,,,
: জ্বি স্যার,,,,
: এখন ও কোথায় আছে?
: জানিনা স্যার,,,,না
বলে চলে গেছে,,,এমন কি ওর বেতনের টাকাও রেখে গেছে,,,,
: আচ্ছা উঠি আজকে,,,,ধন্যবাদ
কো-অপারেট করার জন্য,,,,মানিকের খবর পেলে,,,,নিন,,,এই নাম্বারে জানাবেন,,,,
: স্যার আ,,আমি জানি,,,,আমি
অন্যায় করছি সত্য লুকায়,,,ক,,,কিন্তু এই,,,এই মেয়েটার কি হত তখন বলেন??
: হুম্ম,,,বুঝেছি,,,,
মেইন রোডে এসে ভাড়ায়
একটা কার ডেকে নেয় আলভি এখন তার গন্তব্য কেমিস্ট্রি ল্যাব। ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসাতে
চেক করলে দেখতে পায় গত রাতে পাঠানো ছবি টার ডিটেইলস পাঠিয়ে আইটি এক্সপার্ট শান্তানু।
লেখা আছে,,,
" স্যার এই
ছবিটা একটা এক্টিভ এ্যপের লোগো,,, আমরা লোকেশন ট্র্যাক করতে পারি নি এখনো,,,আর অবাক
ব্যাপার হলো কোনভাবেই এ্যপ টা ওপেন হচ্ছে না কিন্তু আমরা ট্রাই করছি,,,,"
মেসেজ টা পড়ে আলভিও
অনেক টাই চিন্তায় পড়ে যায়। এই খু**নের সাথে আদৌ কি এ্যপের কোন সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
নিজেকে একটু ফ্রেশ করার জন্য চলন্ত কারের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো আলভি। রাস্তার
দুই পাশে উচু সবুজ গাছের জংগল। কাট ফাটা রোদেও এই রাস্তাটায় শীতল হাওয়া দিচ্ছে।
হঠাৎ আলভি গাড়ি ব্রেক
করতে বলে " রিভার্স করতো,,,,হ্যাঁ,,,, হ্যাঁ,,,, এইখানে,,,এইখানে,,,,এই কাচা রাস্তা
টা কোন দিকে যায়?
: এটা স্যার পাচুলিয়া
আর হাসেমপুরের জংশন,,,,
: এই পথে?!!
: জ্বি স্যার মাত্র
পয়তাল্লিশ মিনিট লাগে,,,,কিন্তু জংগলের ভিতরে তাই রাতে কেউ যায় না এ পথে,,,,
: আর মেইন রোডে গেলে?
: দু' আড়াই ঘন্টা
তো লাগবেই,,,,
: তাহলে এ পথে চলো,,,,
: স্যার ফিরতে যে
সন্ধ্যা হয়ে যাবে,,,,আমিতো,,,
: এক্সট্রা ভাড়া
দিবো,,,,আমার খুব দরকার নিয়ে চলো,,,
---------------------
কিশোর বয়সের এক ছেলে
চেয়ারে বসে কান্না করছে। সামনে থাকা ব্যাক্তিটি গম্ভীর স্বরে বলে " কি হলো জিসান?,,,
তুমি কি হার মেনে নিচ্ছো?"
: নাহ!,,,আমি হারতে
শিখি নি,,,,
: তাহলে তুমি এখন
কি করবে?
: আমার আত্মার বিসর্জন
করবো,,,পাপ মুক্তি চাই আমি,,,পাপ মুক্তি,,,,,,,,
চলমান.....
( গল্প টি আপনার
কেমন লাগছে কিংবা এর প্লটের কোন ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইলো)
0 Comments