লেখিকাঃ তাবাসসুম কথা

তমা বেগম হীরকে তার পা থেকে উঠিয়ে বুকে জরিয়ে নিলেন। হীরের আকুতি মিনতি তার মন গলিয়ে দিয়েছে। তমা বেগমের হীরকে এভাবে জরিয়ে ধরে কান্না করাতে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হীরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তমা বেগম বলতে শুর করলেন,
-- আমাকে ক্ষমা করে দে হীর! আমি টাকার অহংকারে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। অহংকার আমাকে জাঁকড়ে ধরেছিল, তাই তো নিজের ছেলের খুশি দেখতে পাই নি। নিজের অহং কে প্রধান্য দিতে গিয়ে এতোগুলো জীবন নষ্ট করতে যাচ্ছিলাম আমি। তোকে আমার তুর্যর অযোগ্য ভেবেছিলাম। কিন্তু একবারও দেখতে চাই নি যে তুই তুর্যর খুশি।
তোদের আলাদা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কখনও বুঝতে চেষ্টা করি নি তুর্য শুধু তোর সাথেই সুখে থাকবে। আজ তোরা একা বিয়ে করে আলাদা সংসার করতে পারতি। আমি চাইলেও কিছু করতে পারতাম না। কিন্তু তোরা আমার খুশি চেয়েছিস। আজকে আমি সত্যি ভীষণ খুশি। আমার পূর্ব কর্মের জন্য আমাকে ক্ষমা করে দে মা।
-- এসব কি বলছো চাচি! তুমি আমার বড়! তুমি কেনো ক্ষমা চাইবে আমার কাছে। আমার উচিত তোমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া। এভাবে পালিয়ে গিয়ে তোমাদের সম্মান হানি করেছি।
-- পালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরাই তোদের বাধ্য করেছি। যা হবার হয়ে গেছে। চাইলেও হারিয়ে যাওয়া ৭ টা বছর ফিরিয়ে আনতে পারবো না। কিন্তু এখন তো সব ঠিক করতেই পারি। আমি তোকে আমার তুর্যর বউ বানাতে চাই। এজন্য আগে হাফসার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আমার। অনেক অন্যায় করেছি হাফসার সাথে। বড় বোন হয়ে এতো অপমান করেছি। আমারি ভুলের জন্য আজ এইভাবে হিয়ার বিয়ে হলো।
হাফসা তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। অহংকারে আমি সম্পর্ক ভুলে গিয়েছিলাম।
-- এসব কি বলছো বড় ভাবি! তুমি আমার সাথে যা করেছো তার জন্য আমিও দায়ি ছিলাম। কখনও তোমাকে সত্যি টা বোঝানোর চেষ্টা করি নি। (হাফসা বেগম)
-- এখন সবকিছু ভুলে নতুন ভাবে সব শুরু করি আমরা। আমার তুর্যর জন্য তোর হীরকে চাই। শুধু যে চাই তাই নয়। তুই মানা করতে পারবি না। কালকেই তুর্য আর হীরের ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে।
আমজাদ সাহেব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন স্ত্রীর দিকে। কেনো যেনো তমা বেগমের এতো ভালো হওয়া তার কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।
-- ওভাবে কি দেখছো তুর্যর আব্বু?
-- তুমি এতো ভালো কিভাবে হলে! (আমজাদ সাহেব)
-- আচ্ছা আচ্ছা রাগ হও কেনো! বিয়ে হবে এটাতো ভালো কথা। এমনিতেও কালকে হিয়া আর তাফসি আসবে। ঘরোয়া ভাবে তুর্য আর হীরের বিয়ে টা হয়ে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বাসার সবাই এখন যথেষ্ট খুশি। এতো বছরের মনোমালিন্যের অবসান হয়েছে। তমা আর হাফসা সেই আগের মতো একে অপরের সাথে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠেছেন। তুর্য আর হীর একপাশে দাড়িয়ে সবাইকে দেখছে। এতো বছর পর আবার সবাইকে এভাবে দেখে তুর্যর চোখ ভরে এসেছে। সবার অগচোড়ে তুর্য হীরকে হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে চলে এলো।
-- হীর!
-- হুম!
-- তোকে কিভাবে ধন্যবাদ দেবো বলতো!
-- ধন্যবাদ কেনো?
-- আমার জীবনে আসার জন্য, আমাকে পরিপূর্ণ করার জন্য!
-- তাহলে তো আমার আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আপনিই তো আমাকে নিজের জীবনে এনেছেন। আপনি আমাকে আপনার ভালোবাসায় বেঁধেছেন। নাহলে আমার মতো তুচ্ছ একজন আপনাকে পাওয়ার মতো সৌভাগ্য রাখে না।
-- এসব কেনো বলিস। তুই তুচ্ছ না। তুই আমার কলিজা। জানিস, যেদিন প্রথম তুই আমার কাছে এসে বলেছিলি,,, "পুতুল খেলায় আমি তোর জামাই হবো।" সেদিন খুব হেসেছিলাম আমি। তোর মাথায় একটা চাটি দিয়ে তোকে বিদায় করেছিলাম। কিন্তু একটু পরেই তুই এসে রাগী মুখ করে বলেছিলি,, "তুর্য ভাইয়া তুমি বড় হয়ে আমার জামাই হবা দেখে নিও।" দেখ এতো বছর পর তোর কথাই সত্য হলো।
-- ভাইয়া!
-- এই বেয়াদপ মেয়ে! স্বামীকে কেউ ভাইয়া বলে! এই ভাইয়া টাইয়া যেনো আর না শুনি তোর মুখ থেকে।
-- আচ্ছা তাহলে কি বলে ডাকবো আপনাকে?
-- ওগো, জান, জানু, জানটুস এগুলো বলে ডাকতেই পারিস।
-- ইশ শখ কতো। আমি এগুলো বলতে পারবো না। আমি তুর্য বলেই ডাকবো।
-- আচ্ছা বাবা তোর যা খুশি তাই বলেই ডাকিস।
-- জানেন আজকে মনে হয়েছিল হয়তো আপনাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি। আজকে যদি বিয়েটা হতো সত্যি বলছি কালকে সকালে সবাই আমার লাশ খুঁজে পেতো।
-- হুশশ! একদিম উল্টা পাল্টা বলবি না। আমি জীবিত থাকতে তোর মুখ থেকে এসব কথা শুনতেও চাই না। পৃথিবী থেকে যদি যেতেও হয় আমি আগে যাবো।
-- আপনি আমাকে ছেড়ে গেলে আমি মরে যাবো। এসব কথা আর বলবেন না।
হীর দুচোখে পানি নিয়ে তুর্যর বুকে মাথা রাখলো। তুর্য হীরের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে শক্ত করে জরিয়ি ধরলো হীরকে।
।
।
।
।
।
পরদিন সকালে,,
ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস থাকায় খুব ভোরেই হিয়ার ঘুম ভাঙলো। অপর পাশে কিশোর ঘুমিয়ে আছে খাটের কোণঘেসে। বোঝাই যাচ্ছে যাতে হিয়ার সাথে টাচ না লাগে এজন্যই এভাবে শুয়েছে। একটা মলিন হাসি দিয়ে উঠে পরলো হিয়া।
কিশোর খুব বেশি ফর্সা নয়, উজ্জল শ্যামবর্ণ গায়ের রং। কিন্তু চেহারায় ভীষণ মায়া। যখন থেকে হিয়া ভালোবাসা জিনিসটা বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই কিশোরের এই মায়া জরানো মুখটা তাকে টানতো। কতো রাত যে সে কিশোর কে নিয়ে স্বপ্নজাল বুনতে গিয়ে ঘুম হারাম করেছে হিসাব নেই। এতো কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে শেষ পর্যন্ত পেলো ঠিকই কিন্তু পরিস্থিতি তার অনূকুলে নেই। তবে এসবের জন্য সে কিশোর কে দোষ দেবে না। এসবটাই তার ভাগ্যে ছিল। ভাগ্যে না থাকলে কেনো কিশোর তার অনুভূতি বুঝতে পারলো না! কেনো তারই ছোট বোনকে কিশোরের মনে ধরলো!! ভাগ্যের পরিহাস তাকে মেনে নিতেই হবে। সে জানেও না কিশোর তাকে কখনও স্ত্রীর অধিকার দেবে কি না। তবুও সে তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর অনুভূতির নাম হলো অপেক্ষা। সেটা সে অবশ্যই করবে,, প্রয়োজন হলে সারাজীবন।।।

সকাল থেকেই হীর আর তুর্যর বাসায় ব্যস্ততার বন্যা বয়ে চলছে। একদিনে এতো আয়োজন করতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে দুই পরিবার। যেহেতু বিয়েটা বাড়ির তাই কাজ ভাগাভাগি করেই চলছে। নিলি-মিলি সকাল থেকে হীরকে একটার পর একটা ফেইস প্যাক, আর হেয়ার প্যাক দিয়েই যাচ্ছে। বেচারি হীর মুখে বেসন আর চন্দের প্যাক দিয়ে বসে আছে। সকাল থেকে না খেয়ে আছে। কিন্তু কেউ ওকে নড়তেও দিচ্ছে না।
নিলয় আর তুর্য শপিং করছে হীর আর তুর্যর জন্য। তুর্য অনেক ঘুরে হীরের জন্য একটা লাল বেনারসি আর গয়না কিনলো। এদিকে রুহান আর তুর্যর ছোট চাচা তাফসি-রায়ান আর হিয়া-কিশোর কে নিয়ে এসেছেন।
সবাই হীর আর তুর্যর বিয়েতে খুশি হলেও কিশোর নিজেকে খুশি করতে পারছে না। প্রচন্ড রাগ উঠছে তার হীর আর তুর্যর উপর। এমন নয় যে ওদের খারাপ চাইছে কিন্তু কেনো যেনো ব্যাপারটা সে মেনে নিতে পারছে না। হীরকে সে ছোট থেকেই দেখে আসছে। ভালোও লাগতো কিন্তু বিয়ের কথাটা তার মাথায় এসেছিল তাফসির হলুদে হীরকে দেখে। সেদিন তার মন হীরের দিকে ঝুঁকে পরেছিল। আর এটাই হয়তো তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। খুব তাড়াতাড়ি হীরকে আপন করে পাওয়ার লোভে পরে এখন সে নিজেই কষ্ট পাচ্ছে। হয়তো তার রাগের কারণ হীর আর তুর্যর ভালোবাসা না। তার রাগের আসল কারণ বিয়ের দিন এভাবে অপমান করা।
কিশোর একা একা হিয়ার ঘরে বসে আছে দেখে হিয়া কিশোর কে ডাকার জন্য যায়।
-- আপনি একা এখানে কি করছেন! আসুন না বাইরে সবার সাথে বসে কথা বলি। সন্ধ্যায় হীর আর তুর্য ভাইয়ার বিয়ে হবে।
কিশোরের প্রচন্ড ইচ্ছা হচ্ছিল হিয়াকে কিছু কথা শুনিয়ে তার রাগ টা কমানোর। কিন্তু বাবার বাড়িতে মেয়েকে অপমান করাটা তার কাছে নিকৃষ্ট কাজ মনে হলো। তাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বাইরে চলে গেলো। হিয়া কিশোরের মনের অবস্থা টা বাইরে থেকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারলো। অবশ্য এখন হিয়ার চোখে কিশোরের সম্মান আরো বেড়ে গেলো। এই মানুষটাকে ভালোবেসে কোনো ভুল সে করে নি।
হীরকে শাড়ি আর গহনা দিয়ে গেছেন হাফসা বেগম। বাড়িতে দুইজন নতুন জামাই এসেছে আবার বিয়ে সব মিলিয়ে মহা ব্যস্ততা। হীর একাই তৈরি হচ্ছে। এতোক্ষণ নিলি-মিলি সাথে ছিল কিন্তু এখন ওরাও নেই। হীরের বেষ্ট ফ্রেন্ডের কল এলে সে কথা বলতে শুরু করে। তাদের কথার এক পর্যায়ে তুর্যকে কিছু একটা গিফ্ট করার প্রসঙ্গ উঠে আসে। হীর কিছু একটা ভেবে কল টা কেটে দেয়।
তুর্য আমাকে কতো গিফ্ট দিয়েছেন আর আমি কি না তাকে কোনো গিফ্টই দেই নি। আজ তো আমার বাসর রাত। আজকে তো গিফ্ট দিতেই হবে। এখন কি করি!! আইডিয়া! নিলয় কে সাথে নিয়ে কিছু কিনে আনি তুর্যর জন্য।
ঘর থেকে বেরিয়ে পুরো বাড়িতে নিলয়কে খুঁজলাম কিন্তু কোথাও নেই। পরে জানতে পারলাম রুহান ভাইয়ার সাথে কোথাও গেছে। নিলি-মিলিও কিশোর ভাইয়া আর রায়ান দুলাভাইয়ের খেদমত করতে ব্যস্ত। কিন্তু তুর্যর জন্য গিফ্ট কেনা টা খুব দরকার। আচ্ছা সবাই তো ব্যস্ত। আমি একাই না হয় যাই কিনে নিয়ে আসি। কেউ টেরও পাবে না যে আমি গিয়েছিলাম। জলদি ফিরে আসবো।
যেই ভাবা সেই কাজ। মোবাইলটা নিয়ে একটা ওরনা মাথায় পেচিয়ে বেরিয়ে পরলাম। কিন্তু বের হতে একটু দেরি হয়ে গেছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। বেশিক্ষণ দেরি করা যাবে না বাইরে।
কাছেই কয়েকটা দোকান ছিল সবগুলোতে গেলো হীর। কিন্তু তুর্যর জন্য পারফেক্ট কিছুই পেলো না। তাই আরেকটু দেখলো। অনেক ঘুরে অবশেষে একটা ঘড়ি পছন্দ হলো হীরের। ঘড়িটা কিনে বিল পে করে ছুট লাগালো। কিন্তু হঠাত্ বৃষ্টির কারণে না আছে কোনো রিকশা আর নাই কোনো গাড়ি। এদিকে সন্ধ্যা শেষে রাত নেমে এসেছে। ঘড়িতে ৭:২৫। অনেক দেরি করে ফেলেছে হীর। আজ কপালে নির্ঘাত মাইর আছে। তুর্য যদি জানতে পারে হীর আজকের দিনও বেরিয়েছে আর এতো দেরি করেছে!! সত্যি কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
উপায়ন্তর না পেয়ে হীর বৃষ্টির মধ্যেই হাটা ধরে। ঝুম বৃষ্টি যাকে বলে,, হীর পুরো ভিজে গেছে। আজকে তার জ্বর নিশ্চিত। বাসর রাতে বউ জ্বরে পুড়বে ভাবা যায়! বৃষ্টির কারণে রাস্তা ইতোমধ্যে জনমানব শূন্য হয়ে গেছে। অন্ধকার হয়ে আছে। হয়তো লোড শেডিং হয়েছে আর নয়তো ল্যামপোষ্টের বাতি টা নষ্ট। হীর অন্ধকারেই যেটুকু পারছে হাটছে।
হীর মোবাইলটাও বের করতে পারছে না, পানিতে ঘড়িটা ভিজে যাওয়ার ভয়ে। কিছুদূর যেতেই হীর থমকে গেলো। কেনো যেনো মনে হচ্ছে কেউ হীরকে ফলো করছে। কিন্তু পিছন দিকে ফিরে কাউকে দেখতে পেলো না। এবার হীরের ভয় করছে। একেতো বৃষ্টি দ্বিতীয়ত সে একা এই শুনশান জায়গায়। হীরের তার হাটার গতি দ্রুত করলো। কিন্তু এবার পিছনে কারো জোরে জোরে হাটার শব্দ পাচ্ছে সে। হীর আর কোনো কিছু নি ভেবি দৌড়ানো শুরু করলো। বেশি না আর ৫ মিনিটের দুরত্বেই বাড়ি। কিন্তু হঠাত কেউ পিছন থেকে হীরকে টেনে ধরে মুখ চেপে ধরলো।
।
।
।
।
বিয়ের জন্য কাজী সাহেব এসে পরেছেন। তুর্যও বর সেজে তৈরি। এখন অপেক্ষা শুধু কনের মানে হীরের। হিয়া আর তাফসি হীরকে আনতে তার ঘরে যায়। দরজায় নক করলে দরজা একাই খুলে যায়। সারা ঘর খুঁজেও যখন হীরকে পায় না তখন হিয়া দৌঁড়ে গিয়ে তুর্যকে কথাটা বলে।
হীর ঘরে নেই কথাটা শুনে মনে হচ্ছে তুর্যর মাথায় আকাশ ভেঙে পরেছে। সে পাগলের মতো সারা বাড়ি খুঁজতে থাকে। ছাদে, বাসার নিচে, আশে পাশে সব জায়গায় খুঁজে খুঁজে পাগল প্রায় কিন্তু হীরের কোনো খবর নেই। হিয়া হীরের মোবাইলে অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন বলছে। তুর্য রুহানকে নিয়ে পুলিশ স্টেশন চলে গেলো মিসিং রিপোর্ট ফাইল করতে।
।
।
।
হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটা অন্ধকার করে চিত্কার করছে হীর। কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফেরার পথে তিনজন বখাটে হীরকে জোর করে তুলে নিয়ে আসে। দু চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে হীরের। সে হয়তো বুঝতে পারছে একটু পর তার সাথে কি হতে চলেছে। হাত দুটো বাঁধা থাকায় সে চেয়েও কিছু করতে পারছে না। পরনের সাদা চুরিদার টা কাঁদায় অনেকটা মাখিয়ে গেছে। ধরে আনার সময় চিত্কার করায় বেশ কয়েকটা চড়-থাপ্পর খেতে হয়েছে তাকে গুন্ডাদের। ঠোঁটের কোনা ফেঁটে রক্ত চুইয়ে পরছে। তবুও সে আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়ানোর।
-- আমাকে প্লিজ যেতে দিন ভাইয়া। আমি আপনাদের ছোট বোনের মতো। আমি কাউকে কিছু বলবো না আপনাদের কথা। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
-- তোমাকে কিভাবে যেতে দেবো সুন্দরী। তুমি তো আমাদের আজকের খাবার। আমাদের আজ রাতের রাণী তুমি। (বখাটেদের একজন)
-- প্লিজ আমাকে যেতে দিন। আমি আপনাদের পায়ে পরছি। আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না। একটু পরেই আমার বিয়ে।
-- বিয়ের আগেই বাসরটা সেড়ে নাও তাহলে।
-- দেখেন আমি তো আপনাদের ছোট বোনের মতো। আমার জায়গায় আপনার বোন থাকলে কি এমনটা করতে পারতেন!
ঠাসস্ করে আরো একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো হীরের গালে তিনজনের মধ্যে একজন। এবারের থাপ্পড়টায় হীরের মাথা ঘুরে উঠলো। হীরের চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে আরো একটা চড় বসিয়ে দিলো অন্য গালে। হীরের ফর্সা গাল দুটো রক্তিম হয়ে গেছে। হীরকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে হীরের শরীর থেকে ওরনা টা টেনে নিয়ে হীরের মুখ বেঁধে দিলো। এখন হীর আর চিত্কারও করতে পারছে না। মোবাইলটা তুলে আনার সময়ই পরে গেছে। সাথে তুর্যর জন্য ভালোবাসায় মোড়ানো উপহার টাও।
এদিকে ২৪ ঘন্টা পাড় না হওয়ায় মিসিং রিপোর্ট ফাইল করে নি পুলিশ।একরাশ রাগ আর কষ্ট নিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসার সময় তুর্যর ছোট বেলার বন্ধু সাদিকের সাথে তার দেখা হয়। সাদিককে সব খুলে বললে সাদিক হীরের ছবি রেখে দেয় আর তুর্যকে আশ্বস্ত করে যে সে সাহায্য করবে হীরকে খুঁজতে। পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়েও শান্তি পায় না তুর্য। তার মন বার বার কু ডাকছে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে হীর কোনো বিপদে পরেছে। তার হীর তাকে সাহায্যের জন্য ডাকছে। তুর্য আবারো বাইক নিয়ে ছুটতে শুরু করলো হীরকে খুঁজতে। কিন্তু দিশাহীন সে,, জানে না হীর কোথায় আছে।।




রক্তাত্ব অবস্থায় রাস্তার ধারে পরে আছে হীর। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত লেগে আছে। টানা ৩ ঘন্টা হীরের শরীরটাকে হায়নার মতো খুবলে খেয়ে চাহিদা পূরণের পর রাস্তার ধারে ফেলে চলে গেছে সেই অমানুষের দল। ব্যথায় অজ্ঞান হয়ে গেছে হীর। কোথায় আছে, কিভাবে আছে, বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে কিছুই বুঝতে পারছে না। বৃষ্টি কিছুক্ষণ আগে থেমে গিয়েছিল। এখন আবার গুড়িগুড়ি ফোঁটা পরছে।
বৃষ্টি সবসময় হীরের পছন্দের ছিল। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা তার জীবনে অনাবিল প্রশান্তি এনে দিতো। আজ সেই বৃষ্টি তার জীবনের সব চেয়ে ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো। গল্পের বইতে, খবরের কাগজে, বিভিন্ন মুভিতে সে ধর্ষণ সম্পর্কে জেনেছে। কিন্তু আজ এই ছোট একটা শব্দ তার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য হয়ে গেছে। তার জীবনের অন্যতম কালো অধ্যায়।
0 Comments