লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা
রক্ত দিয়ে কেবিন থেকে বের হওয়া মাত্রই তৌফিক ইসলাম ছুটে আসেন।
“উষ্ণ বাবা, রক্ত দেওয়া শেষ?”
“জ্বি আংকেল।”
“দোয়া করো বাবা, আমার মেয়েটা যেন বেচে থাকে।”
“অবশ্যই করবো, তটিনী আমার বোনের মতো।”
“বাড়ি যাবে না?”
“জ্বি আংকেল যাবো।”
“চলো আমি পৌঁছে দিয়ে আসি।”
উষ্ণ নাকোচ করে।
“না না আংকেল, আমি যেতে পারবো। আপনার এখন আন্টির কাছে থাকা টা বেশি দরকার। ওনার মনের অবস্থা ভালো না।”
উষ্ণের কথার প্রেক্ষিতে তৌফিক ইসলাম আর কথা বাড়ায় না। সত্যিই এখন তার স্ত্রীর কাছে থাকা টা বেশি আবশ্যক। সে একবার আরিফা বেগমের দিকে তাকায়। উষ্ণ ততক্ষণে চলে গেছে। তৌফিক ইসলাম স্ত্রীর পানে যান।
“আরিফা, কেঁদো না। তটিনী সুস্থ হয়ে যাবে।”
স্বামীর কণ্ঠ কর্ণধার হওয়ায় তিনি পাশে তাকান।
“আমার তটিনীর জ্ঞান ফিরেছে?”
শান্ত, মলিন কণ্ঠস্বর। যেন কিছু হয়নি। কিন্তু তার ভিতরে তোলপাড় বয়ে চলেছে। সন্তানকে না দেখা অব্দি, তাকে না ছোয়া অব্দি এ তোলপাড় শান্ত হওয়ার না।
“না, রক্ত দিচ্ছে। তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে যাবে।”
মাথা নিচু করে ফেলে আরিফা বেগম। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা নোনাজল। স্ত্রীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তার মাথায় হাত রাখে পাশে বসা তৌফিক ইসলাম। তার চোখজোড়াও জলে টইটম্বুর। আরিফা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে বিড়বিড় করতে থাকে,
“ইয়া আল্লাহ্, এ দিন কেন দেখালে তুমি আমায়? ছোট মেয়েকে এমন মৃত্যুর মুখে ফেলে বড় মেয়েকে ফিরিয়ে দিলে। কিন্তু আমি তো মা। আমি আমার দুই সন্তানকেই আমার বুকে চাই।”
স্ত্রীর এমন করুণ পরিণতি সহ্য হয় না তৌফিক ইসলামের। তার ক্রন্দনরত আদলের দিকে তাকালে বুকের ভিতরটা যেন ফেটে যায়। বেশ কিছুক্ষন কেউ আর কোনো কথা বলে না। তাদের মাঝে কঠোর নিরবতার সৃষ্টি হয়। শুধু চলতে থাকে দুটি পিতা মাতার করুণ আহাজারি।
_________
পরণে সেই রক্তমাখা জামা পড়ে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক রমণী। সন্ধ্যার এই রঙিন আকাশ এখন ভীষণ সুন্দর লাগছে। তবে মোহ'র কাছে মনে হচ্ছে এই লালরঙা আকাশে মিশে আছে তার সহদোরা'র রক্ত। আজ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। সে কী খুব অভিশপ্ত? আজ তার জন্য তার প্রাণপ্রিয় বোনের এমন অবস্থা।
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে আসে সে। জন্মদাত্রীর এমন রুপ সে দেখতে চায় না। সহ্য হবে না তার। প্রভাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। মোহ নিজে বাড়িতে এসে ওই যে আকাশ দেখতে বসেছে আর ওঠে নি। পোশাক টাও পালটায় নি। মোহ'র মুখে না আছে হাসি আর না আছে কোনো হতাশার ছাপ। যেন সব স্বাভাবিক। হঠাৎ তার চোখ যায় আকাশে জ্বলজ্বল করা সন্ধ্যা তারাটার দিকে। সেদিকে তাকিয়েই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় মোহ।
“ইশ, যদি ওই তারাটা আমি হতাম। ওইভাবে জ্বলজ্বল করে সবাই আমার উপস্থিতি বোঝাতে পারতাম। যদি চোখের ভাষায় বলতে পারতাম যে ‘আমি আছি’।”
পরক্ষনেই খিলখিল করে হেসে ফেলে সে। আনমনে গেয়ে ওঠে,
“যদি কখনও আকাশ বেয়ে চুপ করে,
যদি নেমে আসে ভালোবাসা টুপ করে,
চোখ ভাঙা ঘুমে তুমি খুঁজ না আমায়,
আশে পাশে আমি আর নেই”
★★★
“তবে এক্সিডেন্ট করা মেয়েটা তটিনী ছিল। কিন্তু মোহ? সে কোথায় ছিল?”
উষ্ণ একা একা প্রশ্ন করতে থাকে। তটিনীর এক্সিডেন্টের কথা শুনেই কিছুক্ষণ হতভম্ব ছিল সে। উষ্ণ ভাবেই নি তটিনীর এমন জটিল অবস্থা হবে। হাসপাতালের মেঝেতে পরে থাকা রক্ত যে তটিনীরই তা বুঝতে বেশি বেগ পোহাতে হয়নি উষ্ণ কে। সে এখন ভার্সিটির ওই স্টুডেন্ট গুলোর কথা মেলানোর চেষ্টা করছে। হঠাৎই মোহদের ক্লাসের ওই মেয়েটার কথা মনে উঠতেই চমকে ওঠে সে।
“ওয়েট, ওই মেয়েটা বলেছিলো মোহ একজন প*তি**তা। কিন্তু ওকে দেখে তো এমন মনে হয় না। তবে কেন সে একটা মেয়ের পবিত্রতা নিয়ে এমন কথা বলবে?”
0 Comments