লেখিকাঃ তাবাসসুম কথা
রাতে,,,
হীরের মাথার কাছে বসে আছে তুর্য। স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হীরের মুখের দিকে। ঘুমের মাঝেই খানিকক্ষণ পর পর ফুপিয়ে উঠছে হীর। বোঝাই যাচ্ছে কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে। হীরকে এই অবস্থায় দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছে তুর্যর কিন্তু সে যে অসহায়। হীরের দু গালে আঁলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো তুর্য। কিছুক্ষণ তার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে হীরকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো।
সকাল থেকে অনেকবার চেষ্টা করেছি তুর্য ভাইয়ার সাথে দেখা করার, একটা বার কথা বলার। কিন্তু কোনো ভাবেই সুযোগ পাচ্ছি না। আম্মু আমাকে ভাইয়াদের বাসায় যেতেও দিচ্ছেন না। তুর্য ভাইয়া আসার পর থেকে একবারও যেতে দেয় নি আমাকে। জানি না কি হয়েছে! কিন্তু ভাইয়ার সাথে দেখা করা আমার জন্য অনেক জরুরি। আমার নিশ্বাস আটকে যাবে আজ তার সাথে দেখা না হলে। সারাদিন পাড় হয়ে গেছে।
বিকেলে নিলির কাছে থেকে জানতে পারলাম ভাইয়া ছাদে আছেন। কথাটা শোনা মাত্রই ছুট লাগালাম ছাদের দিকে। কিন্তু এবারো আমাকে হতাশ হতে হলো। তুর্য ভাইয়া আর রুহি আপু একসাথে কফি খাচ্ছেন। বুঝতে পারছি না এদের দুজনের মধ্যে কি চলছে। দুদিন ধরে এমন ভাবে চিপকে আছে মনে হচ্ছে কেউ ফেভিকলের আঠা লাগিয়ে দিয়েছে। আমার কষ্ট হচ্ছে অনেক তাদের একসাথে দেখে। আবার রাগও হচ্ছে প্রচন্ড।
লোকটার সাহস কতোদূর আমি থাকতে অন্য মেয়ের সাথে কফি খাচ্ছে। আমি যতোই সহ্য করছি এই লোকটা আরো বেশি বারাবারি করছে। একবার বিয়েটা হোক এই বড় চুলগুলো সব টেনে টেনে ছিড়ে দেবো। কিন্তু তার আগে এই শাকচুন্নি রুহির কিছু একটা করতে হবে। নিজেকে মনে টা করে কি বেহায়া মেয়ে! অন্যের স্বামীর দিকে নজর দেয়। আজকে এর একটা বিহিত করতেই হবে। এতো সহজে তোমাকে ছাড়বো না তুর্য লুচি পরোটা। আমি সামনের দিকে এগিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আম্মু আমাকে সেখান থেকে টেনে নিয়ে গেলেন।
-- তুই ছাদে কি করছিলি?
-- কেনো ছাদে যাওয়া কি নিষেধ নাকি?
-- তুর্য আর রুহি একসাথে ছিল । তুই ছোট মানুষ তোর কি কাজ ওখানে?
-- মানে!
-- মানে হলো আজ বাদে কাল তুর্য আর রুহির বিয়ে হবে তাই ওরা একসাথে থাকলে তুই যাস না ওদের কাছে।
আম্মুর কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। এটা কি শুনলাম আমি। ভাইয়া আর রুহির বিয়ে!! কিন্তু আমি যে তাকে ভালোবেসে ফেলেছি!! আমার কি হবে! আমি কিভাবে থাকবো তাকে ছাড়া! কিভাবে আমার চোখের সামনে তাকে অন্য কারো হতে দেবো! না না আমি পারবো না। আমি কিছুতেই তাকে অন্যকারো হতে দিতে পারবো না। ভাইয়ার সাথে কথা বলতেই হবে!
ভাইয়ার নাম্বারে অনেকবার কল করলাম কিন্তু কলটা রিসিভ করছেন না। এদিকে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাসায় সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। কেউ জানে না ভাইয়া কোথায়। হয়তো জানলেও আমাকে বলবে না।
সেদিন রাতে আর ভাইয়ার দেখা পেলাম না। আমার বুকের ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে তাকে হারানোর ভয়ে আর কষ্টে। আচ্ছা তার কি আমার কথা একবারও মনে পরছে না? একই বাড়িতে থাকার পরেও সারা দিনে একটাবারের জন্য তার মুখটা দেখতে পারি না। সে কি আদৌ আমাকে ভালোবাসে নাকি সবটাই অভিনয় ছিল! না না এটা অভিনয় হতে পারে না। ভাইয়ার চোখে আমি নিজের জন্য ভালোবাসা দেখেছি। উনিও আমাকে ভালোবাসেন। আর আমি আমার ভালোবাসাকে কিছুতেই অন্যকারো হতে দেবো না। এজন্য আমার যা যা করা প্রয়োজন সব করবো।

ছাদে দাড়িয়ে স্মোক করছে তুর্য। কালকে তাফসির হলুদের ফাংশন। এজন্যই এতোরাত পর্যন্ত ছাদে থাকতে হয়েছে তার। সব আয়োজন সে নিজে করেছে। আদরের বোন বলে কথা। মোবাইলটা হাতে নিয়ে হীরের মিস কল গুলো দেখে আবার মোবাইলটা রেখে দেয়। সে জানতো হীর তাকে ফোন করবে। সে এটাও জানতো কলগুলো সে রিসিভ করতে পারবে না। ৩/৪ টা সিগারেট একসাথে শেষ করে নিচে চলে গেলো।
ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো তুর্য। আজ সে বড্ড ক্লান্ত। অভিনয় করতে করতে আজ সে ক্লান্ত হয়ে গেছে। দীর্ঘ ৭ বছর যাবত অভিনয় করে আসছে সে। আপনজনদের জন্য আপনজনদের ঠকাচ্ছে। সে জানে না আর কতোদিন এভাবে চলতে হবে তার। বিছানা থেকে উঠে ব্যালকোনি দিয়ে সোজা হীরের ঘরে চলে গেলো তুর্য।

বরাবরের মতো আজও কান্না করতে করতে ঘুমিয়েছে হীর। ঘুমন্ত হীরকে দুচোখ ভরে দেখছে তুর্য। আর কতো অপেক্ষা করতে হবে কে জানে। তবে যতো অপেক্ষাই করতে হোক এবার তার অপেক্ষার ফল মিষ্টিই হতে হবে। হীরের গালে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বেশকিছুক্ষণ হীরের দিকে তাকিয়ে রইলো। হীরের গালের লালচে তিলটা এখন আর লালচে নেই। সময়ের সাথে সাথে তিলটা কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। অবশ্য এই তিলটা হীরের সৌন্দর্য আরো বারিয়ে দিয়েছে। অনেকক্ষণ এভাবে থেকে হীরকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো তুর্য।
।
।
।
।
।
।
।
সকাল থেকে বাড়িতে সবাই মহা ব্যস্ত। আজকে তাফসি আপুর হলুদের ফাংশন। কারো যেনো নিশ্বাস নেওয়ারও সুযোগ নেই। বড় চাচি, আম্মু সবাই ছাদে কাজ করছেন। সেই সুযোগে আমি তুর্য ভাইয়াদের বাসায় হানা দিলাম। আজ যে কোনো উপায়ে ভাইয়াকে সব বলতেই হবে। তার আর রুহির বিয়ে ভাঙতেই হবে। আমি আমার জিনিস অন্য কাউকে দেবো না।
ভাইয়ার ঘরের সামনে যেতেই আমার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। রুহি আপু ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে। তাদেরকে এই অবস্থায় দেখে নিমিষেই আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা গরিয়ে পরে। যতোটা না কষ্ট হচ্ছে তার থেকেও বেশি রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সাত পাঁচ না ভেবে ভাইয়ার ঘরে ঢুকে পরলাম। ঘরে ঢুকেই রুহিকে ভাইয়ার কাছ থেকে টেনে সরিয়ে ঠাসস্ করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম রুহির গালে। রুহি বয়সে আমার বড়। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি এসব কিছুই ভাবতে পারছি না। আমার চোখে এখন রুহি শুধু একটা বেহায়া মেয়ে যে আমার ভালোবাসার দিকে নজর দিয়েছে। আমার এভাবে চড় মারাতে রুহি আর ভাইয়া দুজনেই থ মেরে দাড়িয়ে আছে। বাট আই ডোন্ট কেয়ার।
-- তোমার লজ্জা করে না পরপুরুষের সাথে এভাবে আঠার মতো চিপকে থাকতে!
-- পাগল হয়েছিস হীর? এভাবে চড় কেনো মারলি আমাকে? (রুহি)
-- মেরেছি বেশ করেছি। আরো মারবো তোকে। তোর সাহস কি করে হয় তুর্যর দিকে হাত বাড়ানোর।
-- তুই আমাকে এসব বলার কে রে? তুর্য আমার, আমি ওর দিকে হাত বাড়াই নাহলে অন্য কিছু করি তুই বলার কে?
-- বললেই কি তুর্য তোর হয়ে গেলো নাকি! তুর্য শুধু মাত্র এই হীরের। আমার জীবন থাকতে তোকে তুর্যর কাছে ঘেসতেও দেবো না। মেহমান হয়ে এসেছিস মেহমান হয়ে থাক। বারাবারি করলে এমন অবস্থা করবো যে কেঁদে পালিয়ে যাবি।
-- তুর্য! তুমি কিছু বলছো না কেনো? দেখতে পাচ্ছো না হীর আমার সাথে কেমন বিহেভ করছে।
-- তুর্য কি বলবে রে! এই লুইচ্চার আবার বলার কি আছে। এতোদিন আমার সাথে লুতুপুতু করে এখন আবার তোর সাথে শুরু করতে চাইছে!! আমি হীর বেঁচে থাকতে এগুলো সম্ভব না। তুই বের হ আমার জামাইয়ে ঘর থেকে। আর যদি কখনও আমার জামাইর ঘরে তোকে দেখেছি না একদম ন্যাড়া করে দেবো।
রুহি কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে যায় আর তুর্য হ্যাবলা কান্তের মতো দাড়িয়ে হীরের কান্ড দেখছে। হীর যে খামখেয়ালী সেটা সে জানতো। কিন্তু হীর যে এতোবড় সাইকো সেটা জানা ছিল না। হীর তুর্যর দিকে ঘুরে রাগে ফুসছে। তুর্যর ছোট একটা ঢোক গিলে নিলো। আজকে হীরের রুদ্ররূপ দেখেছে সে। রুহির এই অবস্থা করেছে না জানি তাকে কি করবে। কিন্তু তুর্যকে অবাক করে দিয়ে হীর কান্নায় ভেঙে পরলো।
-- আপনি আমার সাথে এমন কিভাবে করতে পারলেন!! আপনার কি একবারের জন্যও মনে হয় নি আপনার এই সবকাজে আমি কষ্ট পাবো!!
আপনি জানেন আমার কতোটা কষ্ট হয় যখন আপনি আমাকে অবহেলা করেন! রুহির সাথে আপনাকে দেখলে মনে হয় কেউ আমার বুকে ধাঁরালো ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। আপনি কেনো আমার মনের অবস্থা টা বুঝেন না?? কি অন্যায় আমি করেছি যার শাস্তি আপনি আমাকে এইভাবে অবহেলা করে দিচ্ছেন?
-- কি বলতে চাইছিস খুলে বল!
-- আপনি এখনও বুঝতে পারছেন না!! আপনি কি সত্যি বুঝতে পারছেন না যে আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি নাকি বুঝেও অবুঝের ভান ধরে আছেন? আমার চোখের পানি কি আপনার চোখে পরে না? আমার বুকের ব্যথা কি আপনি অনুভব করতে পারেন না? আপনার মন কি একবারের জন্যও আমার মনের খোঁজ নিতে চায় না!!! চুপ করে থাকবেন না তুর্য উত্তর দিন প্লিজ উত্তর দিন। আমি আর এভাবে থাকতে পারছি না। আমার ভীষণ কষ্ট হয় আপনাকে ছাড়া। প্লিজ কিছু বলুন।
-- আমি কি তোকে একবারও বলেছি যে আমি তোকে ভালোবাসি? নাকি কখনও তোকে নিজের কাছে টেনে নিয়েছি? বল!
-- কি বলতে চাইছেন?
-- আমি তোকে ভালোবাসি না। এটাই বলতে চাইছি।
-- ভালোবাসেন না!! এতো সহজে বলে দিলেন ভালোবাসেন না!! তাহলে এতোদিন যা করেছেন সেগুলো কি ছিল? আমার এতো কেয়ার নেওয়া, সবার সামনে প্রপোজ করা, এতো সারপ্রাইজ, স্পেশাল ফিল করানো এসব কি ছিল!! এগুলো যদি ভালোবাসা না হয় তাহলে আর কি??
-- এগুলো নাটক ছিল হীর তোকে আমি আগেই বলেছিলাম।
-- সবটাই কি নাটক ছিল!! কিছুই ভালোবাসা ছিল না!! বলুন না!!
-- হ্যাঁ সবটাই নাটক ছিল।
-- না এসব মিথ্যে আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন। আপনার চোখ বলে দেয় আপনি আমাকে ভালোবাসেন। আপনার স্পর্শ আমাকে জানিয়ে দেয় আপনি আমাকে কতোটা আপন করে চান।
-- এসব কাব্যিক কথা হীর! বাস্তব জীবনে এসবের কোনো ভিত্তি নেই।
-- এসব কথার ভিত্তি না থাকলেও অনুভূতির ভিত্তি আছে। আমি আপনার প্রতিটা নিশ্বাস অনুভব করতে পারি।
-- তুই প্লিজ চলে যা এখান থেকে।
-- হ্যাঁ যাবো। তবে মনে রেখেন আপনি নিজে আমার হাত ধরে এই ঘরে, আপনার জীবনে নিয়ে আসবেন।
তুর্যকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হীর কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে গেলো। নিজের ঘরে গিয়ে হীর ঝর্ণার নিচে বসে কাঁদতে লাগলো।
অমার সাথেই কেনো এমন হয়। কেনো আমি পূর্ণ হয়েও অপূর্ণ। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে দেখছি, আমার নিজের বলতে কিছুই আমার নেই। এ বাড়িতে হিয়া আর অন্য বাচ্চারা যতোটা আদর পায় তার এক আনাও আমি পাই নি কখনও। এতোদিন পর ভালোবাসা কি জিনিস বুঝতে শিখেছিলাম। যার হাত ধরে সুখের সাগরে ভাসতে চেয়েছিলাম সেই মানুষটা তো আমার হাত ধরতেই চায় না। যাকে আমি ভালোবাসলাম সে তো আমাকে ভালোইবাসে না। কেনো সবসময় আমার সাথেই এমন হয়। সব কিছু পেয়েও কেনো আমি কিছুই পাই না।



তাফসির হলুদের ফাংশন শুরু হয়েছে অনেকক্ষণ আগে। বাসার বড়রা সবাই হলুদ লাগিয়ে দিয়ে নিচে চলে গেছেন। ছোটরা সবাই আনন্দ করছে। তুর্য মেহমানদের সামলাতে ভারী ব্যস্ত। কিন্তু এসবের মাঝে একমাত্র হীর অনুপস্থিত।হাজার ব্যস্ততার ভীরে তুর্যর চোখ দুটো শুধু হীরকে খুঁজছে। কিন্তু না অনুষ্ঠানের কোথাও হীর নেই। বেশকিছুক্ষণ পর তুর্য সামনে তাকাতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়।
হীর একটা লাইট ইয়েলো কালারের পাতলা শাড়ি পরে সবার সামনে দাড়িয়ে আছে। শাড়ি পরাতে তুর্যর কোনো সমস্যা নেই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শাড়িটা মাত্রাতিরিক্ত পাতলা। হীরের অলমোষ্ট পুরো শরীর দেখা যাচ্ছে শাড়ির আড়ালে। তার ওপর আবার ব্যাকলেস ব্লাউজ পরে আছে। ঠোঁটে মেরুন কালারের লিপষ্টিকটায় যেনো আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছে হীরকে। হীরের এই রূপ দেখে রাগে তুর্যর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। রাগে সাপের মতো ফুসছে সে। কারণ অনুষ্ঠানে অনেক ছেলেরা উপস্থিত আছে। তুর্যর অনেক ফ্রেন্ডরা এসেছে যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ফ্লার্ট টাইপের। আর তারা হা করে হীরকে দেখছে যাকে বলে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। তুর্য এসব সহ্য করতে পারছে না। তুর্য হিয়ার কাছে গিয়ে ওর কানে কানে কিছু একটা বলে সেখান থেকে চলে গেলো।
হিয়া হীরের কাছে এসে হীরকে একটু সাইডে নিয়ে গেলো।
-- এগুলো কি পড়েছিস হীর!
-- কেনো শাড়ি পড়েছি দেখতে পারছিস না?
-- দেখতে পারছি বলেই তো বলছি। শাড়ির অবস্থা দেখেছিস! সব দেখা যাচ্ছে।
-- এতো ঘ্যানঘ্যান করিস না তো। তোর কাজে তুই যা। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই পরবো।
-- তোকে কিছু বলাই বেকার।
-- তো বলিস না।
হিয়া ভেঙচি কেটে সেখান থেকে চলে গেলো। হীর আশেপাশে মাথা ঘুরিয়ে তুর্যকে খুঁজছে। কিন্তু তুর্যকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
ধূর কোথায় গেলো তুর্য ভাইয়া! যাকে জেলাস করানোর জন্য এতো কিছু করলাম তারই খবর নেই। এই লোকটা পুরোই একটা খচ্চর। আমার নিজেরই কেমন অস্বস্তি হচ্ছে এতো পাতলা শাড়িতে। যাই বাবা শাড়িটি চেঞ্জ করে নেই। আমার দরকার নেই কাউকে জেলাস করানোর। নিচে নামতে যাবো তখন কিশোর ভাইয়া পিছন থেকে ডাকলেন। কিশোর ভাইয়া আব্বুর বন্ধুর ছেলে। বয়সে আমার আর হিয়ার অনেক বড়। অনেকটা তুর্য ভাইয়ার সমান।
-- কেমন আছো হীর?
-- ভালো। আপনি ভালো আছেন ভাইয়া?
-- হ্যাঁ। অনেকদিন পর দেখলাম তোমাকে। অনেক বড় হয়ে গেছো তুমি।
-- ওহ। আচ্ছা ভাইয়া আপনি এনজয় করেন আমি তাফসি আপুর কাছে যাচ্ছি।
কিশোর ভাইয়ার সামনে থাকতে খুব অস্বস্তি লাগছিল তাই সেখান থেকে চলে গেলাম। একটু সামনে এগোতেই হঠাৎ লাইট চলে গেলো। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। আচমকা আমার মনে হলো কেউ পিছন থেকে আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ আমাকে কোলে তুলে নিলো। অন্ধকার হওয়াতে কিছু দেখতে পারছি না তবে বুঝতে পারছি আমাকে কোলে নিয়ে লোকটা সিড়ি বেয়ে নিচে নামছেন।
0 Comments