Ad Code

শ্যামকন্যার মায়াবী চোখ - পর্ব ৫০

 লেখিকাঃ আবিদা সুলতানা

🚫🚫
কঠোরভাবে কপি করা নিষিদ্ধ। যাদের অতিরিক্ত রোমান্টিক গল্প পছন্দ, তাদের জন্য এই গল্প নয়। অনুগ্রহ করে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। পুরো গল্প জুড়ে থাকবে ধোঁয়াশা, যা উদঘাটন করতে সত্যিকারের ধৈর্য প্রয়োজন। শুধুমাত্র রহস্যভেদে আগ্রহী পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত।
🚫🚫
শীতের এ নিস্তরঙ্গ দুপুরে সূর্যের রশ্মি টগবগ করে ঝলমলিয়ে উঠেছে! মোশারফ সাহেব এক হাতে চশমার ফ্রেম ঠেলে চোখে আঁটিয়ে রেখেছেন, অন্য হাতে ধোঁয়ায় ঘন রঙ চায়ের কাপ ধরে আছেন। জরুরি কাজের গাম্ভীর্যে নিমগ্ন, তার অনিঃশেষ মনোযোগে খানিক পরপর চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। এইসময়ে সাজ্জাদ সাহেব বাহির হতে প্রবেশ করেই দৃপ্ত কণ্ঠে বলল,
——— "আমাদের গ্রাম এভাবে চেয়ারম্যানের অভাবে আর কতদিন চলবে ভাই? তুমি মুগ্ধর সাথে কথা বলছ না কেন?"
মোশারফ সাহেব ধীরে ভ্রূ কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
——— "তুই কি তোর ভাতিজাকে চিনিস না? সে যখন বলেছে খুনি না ধরা অবধি কোনো নির্বাচন হবে না, তার মানে তা হবেই না!"
——— "কিন্তু সময় তো নেহাতই কম পেরোলো না! এভাবে আর কতকাল? খু'নিকেও তো এখনো ধরা যায়নি।"
মোশারফ সাহেব একপ্রকার ক্ষীণ হাসি হেসে বললেন,
——— "এত অধৈর্য হওয়াটা কি সঙ্গত? জানিস তো, কত কত প্রাণ ঝরেছে এই গ্রামে! অগণিত হ'ত্যার র'ক্তের দাগ! আর খু'নি কি এতটাই নির্বোধ যে এত সহজে ধরা পড়বে? এই ধরনের কেস সময়ের দাবি রাখে। পুলিশও ব্যর্থ হলে সিআইডি পর্যন্ত এসে পড়েছে! বুঝতেই তো পারছিস কত জটিল কেস এটি! আর কিছুই পাওয়া যায়নি, এমন কথা বলিস না। শিকদার বাড়ির অপকর্মের ইতিহাসের দলিল তারা উদ্ধার করেছে, তাদের ব্যবসার অসংখ্য পঙ্কিল গোপন সূত্র পর্যন্ত খুলে দিয়েছে!"
সাজ্জাদ সাহেব মুখে শঙ্কার রেখা টেনে বলল,
——— "আচ্ছা ভাই, তুমি কিন্তু কিছু করোনি তো? মানে, ইকরামকে তুমি নিজ হাতে শেষ করোনি তো?"
মোশারফ সাহেব ঠোঁটে হাসি মিশিয়ে বললেন,
——— 'কে জানে! হয়তো... হয়তো না।"
সাজ্জাদ সাহেব স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই, মোশারফ সাহেব তার অন্যমনস্ক দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বললেন,
——— "আবার রাগে তুই নিজেই মে'রে বসিসনি তো? প্রায়ই বলতিস না, একদিন মে'রেই ফেলবি!"
——— "আ-আরে! না-না, কীসব বলছো তুমি?"
——— "হুম! এমনি বলে ফেললাম, তোর মুখ দেখেই!"
সাজ্জাদ সাহেব গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে গালে হাত বুলিয়ে বললেন,
——— "আমার মনে হয়, এই হ'ত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী শিকদার বাড়ির কারো হাতেই নিহিত! ইকরামের হ'ত্যা তো প্রমাণ করে যে, হ'ত্যাকারী ওদেরই কেউ হতে পারে!
——— "একথা হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে! কুদ্দুস তো ইতোমধ্যেই ধরা পড়েছে!"
তাচ্ছিল্যের স্বরে সাজ্জাদ সাহেব বললেন,
——— "আরে, ও তো মূর্খের ছুতোমাত্র! কপটতার আড়ালে প্রকৃত খলনারায়ণ তো আরও বড় কেউ!"
——— "আজগর?"
——— "হ্যাঁ, হতেই পারে!! ওই যে শয়তানের হাড্ডিই! বড় ভাই নিহত হয়েছে, মেজো ভাই কারাগারে! অথচ তার দম্ভ! অহঙ্কারে যেন মাটি স্পর্শ করার সামর্থ্যও হারিয়েছে!"
——— "স্মরণ রেখো, অহঙ্কারই পতনের প্রধান কারণ!"
——— "যথার্থই বলেছো!"
মোশারফ সাহেব হাসিমুখে বললেন,
——— "আর শোন, তোর গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন নেই! সিআইডিই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ভার নিবে! আর চেয়ারম্যান না থাকায় গ্রামবাসীর কোনো অসুবিধাই হচ্ছে না! বরং বিরোধী দলের লোকেরা এতদিনে সাধারণের সেবায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যেন তাদের পক্ষেই জনসমর্থন যায়। আর আমাদের পক্ষ থেকেও কি কম হয়েছে? এসব নিয়ে মনস্থিরে ব্যাঘাতের প্রয়োজন নেই!"
সাজ্জাদ সাহেব নিঃশব্দে মাথা দোলালেন, আর মোশারফ সাহেব তীক্ষ্ণ হাসির রেখা বয়ে চুপ থাকলেন।
সিআইডির নির্দেশ সুস্পষ্ট: যতক্ষণ খু'নি মুক্ত, ততক্ষণ কোনো নির্বাচন অনুপস্থিত! সুনামধন্য প্রবীণগণ সাময়িক দ্বিধায় নিমগ্ন হলেও সিআইডির অনমনীয় পদক্ষেপের সামনে নতজানু হতে বাধ্য হয়েছে। অথচ এতে সাধারণ জীবনে কিঞ্চিৎ বিঘ্নিত হয়নি! কেননা রাজনীতির সূক্ষ্ম খেলা এখানেও প্রবল। বিচক্ষণতার সঙ্গে সিআইডি এই পথই বেছে নিয়েছে, কারণ এখন সকল পক্ষই ভোটের লোভে সাধারণ মানুষের সেবায় ব্যস্ত। যদিও সবকে ভোট দেয়া সম্ভব নয়, তবে সবারই সহযোগিতা অনায়াসে পাওয়া যাচ্ছে।
কী হতো যদি এই সেবা কেবল জনহিতার্থেই হতো? ক্ষমতার মোহে কি না করতে পারে মানুষ! ক্ষমতার জন্য লালসা, এটি মানবপতনের প্রধানতম কারণ। প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি তো সাধারণের কল্যাণসাধনের জন্য রচিত; কিন্তু আজ ক্ষমতাসাধনায় পর্যবসিত হয়ে সাধারণকে শোষণের এক অস্ত্ররূপে রূপান্তরিত হয়েছে। রাজনীতির অন্তিমে যদিও ‘নীতি’ শব্দটি যুক্ত থাকে, তার শরীরে আজ সেই ‘নীতির’ ন্যূনতম ছাপও রয়ে নেই।
__________________
আজগর আলী শিকদার বাড়ির ড্রয়িং রুমে রোকেয়া বেগমের সাথে গভীর আলাপে মগ্ন, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তাদের কনিষ্ঠা কন্যা, আলো। সদ্য স্কুল ফেরত আলোর কান্নাজড়ানো অভিযোগ, সহপাঠীদের বিদ্রূপ, তার মেজো পিতৃস্থানীয় ব্যক্তির খুনির পরিচয়ে লাঞ্ছনা, এবং শিক্ষকের অস্বাভাবিক দৃষ্টি, আজগরের অন্তরে ক্রোধের সঞ্চার ঘটিয়েছে।
সিআইডির তদন্ত যতই তার ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সীমানা খুঁজে বেড়াক না কেন, তিনি কৌশলে সকল দোষ ইকরাম ও কুদ্দুসের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে আইন তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। শিকদার বাড়ির একচ্ছত্র অধিপতি রূপে এখন আজগরই সম্রাট, তাঁর ইচ্ছায়ই গৃহের প্রতিটি পদক্ষেপ নির্ধারিত। প্রতিকূলতার মাঝে, জনমুখে অবিরত চলাফেরা করেই তিনি এই আধিপত্য সুসংহত করেছেন।
হঠাৎ এতো বড় ব্যবসার ভার কাঁধে পড়ায় প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলেও, কূটনীতির সূক্ষ্মতায় তিনি প্রবল। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত রক্তের ধারায়ই মিশে আছে রাজনৈতিক চাতুর্য। রাজধানীর শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিত্বের সাথে তার দীর্ঘকালীন পরিচয়, যে পরিচয় তাঁকে অবিচল শক্তির প্রতিমূর্তি রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গ্রামের লোকেরা তাঁর মুখোমুখি কিছু উচ্চারণ করার সাহস পায় না; কারণ ক্ষমতার এই পিতৃপরিচিত উত্তরাধিকার কি এত সহজে ধ্বংসযোগ্য?
আজগর আলী, তাঁর জঠরবেদনায় তপ্ত অন্তরের অগ্নিবীজান হয়ে আছেন। সেই প্রগাঢ় ক্রোধের মর্মে একটিই চিন্তা, তার কন্যাকে অপমান করার স্পর্ধা কার, কেমন করে আসল? আলো যে কার র'ক্ত, এই সাহসীদের কি সে জ্ঞান লুপ্তপ্রায়? কন্যার অপমানের প্রতিশোধে তিনি উন্মুখ, এই লাঞ্ছনাকারীদের এক একটি দৃষ্টির প্রত্যেকটি বিন্দুর স্বরূপ তিনি মুছে ফেলবেন; যেন তারা আর কখনো তার কন্যার দিকে অপমানসূচক দৃষ্টিপাতের সাহস সঞ্চার না করে।
রোকেয়া বেগম, সতর্ক ও স্থির, এই উত্তাল আগুনে জল ঢালার প্রস্তাব নিয়ে তাঁকে ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে চেষ্টা করছেন। তিনি আজগরকে সোফায় বসিয়ে ধীর কণ্ঠে পরামর্শ দিচ্ছেন,
——— "প্রথমে মামলার নিষ্পত্তি হোক, তারপর কেবল সকল ক্রোধের প্রতিশোধ। ততদিন নিজেকে সংযত করো, এই ক্রোধে ক্ষণিক ধৈর্য ধরো।"
কিন্তু আজগর আলীর কণ্ঠে তেজের অগ্নি বিস্ফোরণ, তিনি বললেন,
——— "যারা আমার মেয়েকে কটু বাক্যে বিদ্ধ করেছে, তাদের কারোই রেহাই নাই! এমন স্পর্ধা তারা কোথা হতে অর্জন করল? আর ওই কথিত সিআইডি বাহিনী, এইসব দম্ভপূর্ণ ভীতি প্রদর্শন করে আমাকে ভয় দেখাবার প্রচেষ্টা ব্যর্থ! কিছু টাকা বরাদ্দ দিলেই পায়ের তলায় লুটিয়ে কু'কু'রের মতো চা'ট'বে !"
তখন সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো আঁখি; হাতে ধরা ফোন, কারো সাথে মৃদু হাসি বিনিময়ে কথা বলছে আর রান্নাঘরের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তার অচেতন হাসিতে আজগর আলীর হৃদয়ের ক্ষতপ্রান্তে ঝরে পড়ল নোনাজল! সাথে রোকেয়া বেগমের মর্মেও ঝড় বয়ে গেল। তবু নিঃশব্দ, মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই! তাদের স্বভাবে যেমনটা হয়। ভেতরে ভেতরে যতই দহন চলুক, বাহিরে নিস্তব্ধ।
এ এক নিস্তরঙ্গ নিঃশব্দতা, যার ভার লাঘব করার ভার তারা ছেড়ে দিয়েছে আফিয়া বেগমের উপর। তিনি-ই বাড়ির নিয়মতন্ত্রের শাসক, ইচ্ছেমতো বকাঝকা, শাসন-উপদেশ দিয়ে মনের তৃপ্তি মেটান। তদুপরি, পারিবারিক সৌজন্যের একখানি মূল্যও বজায় রাখতে হয়, সন্তানদের সামনে তো সম্মানের একটা বিষয় থাকে। তারা যদি দেখে মা-বাবাই কন্যাকে তিরস্কার করছে, তবে সংসারের মর্যাদাটুকু ঝরে পড়ে। এইজন্য মুখে কোনো শব্দ উচ্চারণ করে না তারা।
অতঃপর, ক্রোধাবিষ্ট আজগর আলী, চাপা গর্জনে রোকেয়া বেগমকে বললেন,
——— "আমি আসছি!"
বলে দপদপিয়ে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে! রোকেয়া বেগমও বিমর্ষ মুখে ফিরে গেলেন নিজের কক্ষে, যেন হৃদয়ের ভারে ভারাক্রান্ত এক মূক নায়িকা।
__
আঁখি ফোনে কথা বলছে মিলির সাথে, আর মধুর হেসে একে একে প্রতিউত্তর দিচ্ছে। রান্নাঘরে এসে এক গ্লাস রস পান করে নিলো; মিলি জানালো যে তারও জুস খেতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু কাছে নেই! তাই তার বদলে আঁখিকেই পান করতে হবে! এমন কথা শুনে আঁখি হাসতে হাসতেই সেই রস পান করলো; এক অদ্ভুত সরলতা মিলির আচরণে। মিলির কণ্ঠ ওপার থেকে ভেসে এলো,
——— "কিরে, খেয়ে নিলি তো?"
আঁখি হাসির মৃদু পর্দা তুলে উত্তর দিলো,
——— "হ্যাঁ হ্যাঁ, খেয়ে নিয়েছি! পাগলি একটা!"
আঁখি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে দোতলায় উঠে এলো, এবং বাইরে রাখা চেয়ারে বসে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এই নিঃশ্বাসে সব ভার নেমে আসছে। আঁখি জিজ্ঞাসা করলো,
——— "এখন বল, কেমন আছিস? শ্বশুরবাড়ির আদর-যত্ন ঠিক পাচ্ছিস? আর দুলাভাই? ভালোবাসা ঠিকমতো জোটাচ্ছে তো? বিয়ের সময় তো অনেক প্রতিজ্ঞা করেছিল!"
মিলি হাসিমুখে উত্তর দিলো,
——— "আরে, আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে যেন তাদের মেয়ে বলেই জানে! আর আমার স্বামী তো চোখে হারায় আমাকে! আমার ননাস আর ননাসের স্বামী তো আমাকে ছোট বোনের মতো দেখে, আসলেই, এখানে এলেই আমার জন্য নানান খাবার নিয়ে আসে!"
আঁখির মুখে এক শীতল অথচ মধুর হাসির রেখা ফুটে উঠলো; কতদিন পর যেন প্রাণ খুলে হাসতে পারলো সে! মিলির সুখের বর্ণনায় তার মন শান্তির স্পর্শ পেলো। তবু, মনে কোথাও যেন চাপা সন্দেহের দাগ রয়ে গেলো, কেননা আঁখি তার প্রখর দৃষ্টিতে মিলির শ্বশুরবাড়ির লোকেদের স্বরূপ দেখেছে; সেখানে সুখের আশ্বাস কতটুকু আসল, সে নিয়ে তার মনে কিঞ্চিৎ সংশয় জেগে উঠলো।
আঁখি কিছুটা দ্বিধায় আচ্ছন্ন কণ্ঠে বলল,
——— “তুই সত্যিই সুখে আছিস তো? দেখ, যদি কেউ তোকে অত্যাচার করে বা কোনো অসম্মানজনক কথা বলে, আমাকে নির্দ্বিধায় জানাস!”
মিলির মুখে এক অসার, নির্মল হাসি ফুটে উঠলো,
——— “আহারে বিলাই রাণী! মিথ্যে কেন বলতে যাব? সত্যিই বলছি, তারা আমাকে খুব আদর করে। আমার তো মনে হয় না আমি শ্বশুরবাড়িতে আছি! সেসব বাদ দে, তুই ভালো আছিস তো?”
আঁখি স্বল্প হাসি হেসে বলল,
——— “হ্যাঁ, আছি।”
ঠিক তখনই, মিলির পেছন থেকে কর্কশ কণ্ঠের চিৎকারে বাতাসের ভারী নীরবতা চূর্ণবিচূর্ণ হলো,
——— “রান্না ফেলে কার সাথে এতক্ষণ ধরে গল্প চলছে? এমনিতেই তোমার রান্না খাওয়ার অযোগ্য! জঘন্য স্বাদ সবকিছুর! তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করো, বাইরে গোবর পড়েছে, সেগুলোও পরিষ্কার করে ফেলো!”
মিলি অপ্রস্তুত হেসে, মাথা নীচু করে নিঃশব্দে সম্মতি জানালো, তার শাশুড়ি তির্যক মুখভঙ্গি করে চলে গেলেন। আঁখি স্পষ্টভাবে কোনো শব্দ শুনতে পেল না, তবে মিলির শাশুড়ির কর্কশ চিৎকারের প্রতিধ্বনি তার কানে প্রতিধ্বনিত হলো, কপালে গভীর দুশ্চিন্তার রেখা গভীরতর হলো।
আঁখি কৌতূহলী কণ্ঠে বলল,
——— “এই, ওটা তোর শাশুড়ির কণ্ঠস্বর, তাই না? এমন কর্কশ চিৎকার কেন করলো?”
মিলি হালকা হাসির ঢঙে উত্তর দিলো,
——— “আর বলিস না! দুপুরে সামান্যই খেয়েছিলাম, তাই নিয়ে এখন বকাবকি করছে। খেয়াল রাখে তো, একটুও না খেয়ে থাকতে দেয় না। বড় স্নেহ করে!”
——— “তুই সত্যিই বলছিস তো?”
মিলি তৎক্ষণাৎ চোখের জল আড়াল করে জোরে হেসে বলল,
——— “হ্যাঁরে, সত্যিই বলছি বিলাই রাণী!”
আঁখির মনের সন্দেহ তখনও নিবৃত্ত হলো না। ধীরে প্রশ্ন করল,
——— “তোকে এত আদর করে, পরিক্ষা দিসনি কেন?”
মিলি আচলের ভাঁজে মুখ লুকিয়ে, অশ্রু গিলে হেসে বলল,
——— “আরে ধুর, কিসের পরিক্ষা? জানিস তো, আমার পড়াশোনায় মন বসে না। এমন সুন্দর সুখের সংসার ছেড়ে কে আবার পরিক্ষায় বসতে যাবে?”
আঁখি একটু থমকে গেল; মিলির কণ্ঠে বিষাদমাখা একটি নির্লিপ্ততা। আঁখি সশঙ্ক কণ্ঠে বলল,
——— “তোর গলা এমন শুনাচ্ছে কেন?”
মিলি আবার হাসি চাপতে চাপতে বলল,
——— “আহা, এই শীতের দাপটে একটু ঠান্ডা লেগেছে! জানিস তো, এই অল্পে সর্দি-কাশি শুরু হয়। শ্বাসকষ্টের সমস্যাও রয়েছে, একটু ঠান্ডা হাওয়া লাগলেই শুরু হয়। এখনো ঔষধ খাইনি। এখন রাখি, কিছু খেয়ে ওষুধ খাই; নইলে আম্মা শুনলে বকাবকি শুরু হবে, কেন ঔষধ এখনো খাইনি তা নিয়ে!”
আঁখি গহন চিন্তায় নিমজ্জিত কণ্ঠে বলল,
——— “এই হিমশীতল বাতাসে খুব বেশি কাজ করিস না! পানির কাছাকাছি যাস না প্রয়োজন ছাড়া, বুঝলি? আর হ্যাঁ, ওষুধ ঠিকমতো খেয়ে নিস কিন্তু! আর কিছু হলে আমায় জানাস! আমি বারবার বলছি, কোনো বিপদে পড়লে বলবি আমায়! আচ্ছা?”
মিলি বেদনাভরা হাসির আবরণে কান্না লুকিয়ে জবাব দিল,
——— “আচ্ছা আচ্ছা, বলব! এখন রাখি!”
কিছুক্ষণ মৃদু নীরবতায় আচ্ছন্ন থাকার পর মিলি ফের মুখ খুলল,
———" আরেকটা কথা আছে, আঁখি!"
আঁখি কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
——— "একটা কেন? যত বলবার থাকে, সবই বল!"
মিলির মুখে এক মৃদু হাসির ছায়া। পাশে শুয়ে থাকা ছোট্ট পিয়াশার দিকে তাকাল, কোমল শিশুটি কম্বলের তলায় গভীর নিদ্রায়। মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিল। এই ক্ষুদ্র প্রাণটিকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবেসে ফেলেছে সে। পিয়াশাও মিলিকে মায়ের মতোই হৃদয়ে স্থান দিয়েছে। এত ভেজাল জগতের ভেতর ছোট্ট এই শিশুর ভালোবাসাই তার কাছে প্রকৃত অমূল্য রত্ন। পিয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে মিলি ফিসফিসিয়ে আঁখিকে বলল,
——— "আঁখি, আমার তো কখনো মা হওয়া হবে না। তবে পিয়াশাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসি। হায়াত-মউতের তো কোনো ঠিক নেই! যদি আমার কখনো কিছু ঘটে, পিয়াশার তদারকিটা তুই করিস!"
মিলির এহেন অমঙ্গলের সুরে আঁখি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে তীব্র কণ্ঠে বলল,
——— "এই! তোর ঐ গাল দুটো কি আমার আঙুলের চাপ খাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে নাকি? ফালতু কথা বলিস না। আর শোন, পিয়াশা আমাদের সবার মেয়ে ! তোরও কিছুই হবে না। এই ধরনের অবান্তর কথা মাথায় আনলেই তোকে ফুটবল বানিয়ে ফাকা মাঠে গোল দিব।"
মিলি মৃদু হেসে বলল,
——— "আরে রে, রেগে যাচ্ছিস কেন? একটু মনের কথা বললাম আর কী!"
——— "এমন মনগড়া কথাও মাথায় আনিস না। তা না হলে তোর মাথার ভেতর ঢুকে মুগুর চালাব বুঝলি?"
মিলির মুখে হাসির আভা ফুটে উঠল। সে বলল,
——— "আচ্ছা আচ্ছা, বুঝেছি। এখন রাখি, পরে কথা বলব তোর সাথে।"
তৎক্ষণাৎ ফোনের সংযোগ ছিন্ন করল মিলি, আর আঁখির অন্তর কেন যেন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। মিলির হাসিটা বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও, তাতে যেন অজানা এক গভীরতা লুকিয়ে আছে। কিছু একটা যেন তার স্পষ্ট দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে।৷ এই সুখের মুখোশেও মনের গহীনে কু-সংকেতের ঝড় বইতে লাগল। অবচেতনে অন্তঃস্রোত আঁখিকে অস্থির করে তুলল, অদৃশ্য ছায়া তার হৃদয় কুরে কুরে খেতে লাগল।
________________
রাত্রির গভীরতা কেটে শান্ত, নাঈম, এবং আঁখি পদচারণায় মগ্ন, সময়ের সরল স্রোতে তারা হেঁটে চলেছে অজানার দিকে। আঁখি প্রত্যেক পদক্ষেপে একটু শঙ্কিত, ভীত মনোরম পল্লী থেকে বিচ্যুত হয়ে নিজস্ব অস্তিত্বের প্রতি সন্দিহান। আর তার সঙ্গী দুজন, শান্ত ও নাঈম, হঠাৎ যেন এক অপ্রকাশিত রহস্যের হাসির নীরব বিনিময়ে লিপ্ত অকারণেই প্রহেলিকাময় সেই হাসি তাদের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছে।
শীতের তীব্রতায় চাদরবদ্ধ কংকালে নাঈম ও শান্ত উভয়েই লং কোটের আচ্ছাদনে আত্মগোপন করেছে, শীতকে তুচ্ছজ্ঞান করছে তাদের অন্তর্নিহিত উষ্ণতা। হাত দু’টি পকেটের ভেতর নিশ্চুপ অথচ প্রান্তিক ঠান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধরত। আঁখিও নিজের হুডের সুরক্ষা নিতে নিতে এক ধরনের আবর্তিত চিন্তার ভেতর নিমজ্জিত, জানেনা, কোথায় তাদের এই গন্তব্য; পিছু ফিরে তাকানোয় অর্থহীন।
গাড়িটি তারা পার্কিং অঞ্চলে ত্যাগ করে এসেছে অনেক দূরে, এক অতলান্তিকের প্রান্তে। সামনের নিস্তব্ধ, নিস্তরঙ্গ পথ শুধু খাম্বার অপার আলোয় ক্ষীণ আলোড়িত হচ্ছে। লোকালয়ের অবতারণা ক্ষীণ হয়ে আসছে, চারপাশে বিরল মানুষের সমাহার; যাদের ভগ্নাংশও একমাত্র কপোত-কপোতির প্রণয়কাহিনী বুনতে দৃশ্যমান। তবু আঁখির মনের কোণায় শঙ্কার ম্রিয়মাণ ভাব, আর এই নীরবতায় লুকিয়ে রয়েছে অমীমাংসিত কোন সুপ্ত সংকেত।
আঁখির তৃষ্ণাতুর কৌতূহল আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বারংবার জিজ্ঞাসার করুণ হাহাকারেও শান্তর গম্ভীর মুখের নিঃশব্দ কঠিনতা ভাঙল না। আঁখি আবার একরাশ শিশুসুলভ ভ্রুকুটি করে বলল,
——— "আমরা কোথায় যাচ্ছি, ভাইয়া? এতক্ষণ ধরে বলছি, আর তোমরা তো কেবল চুপ করেই রয়েছো!"
তার সরল কণ্ঠে ক্ষণিক বিরক্তির ছাপ রেখেও নাঈমের ঠোঁটের কোণে বিদ্রূপাত্মক হাসির রেখা ফুটে উঠল। শান্ত সুতীব্র কণ্ঠে বিরক্তি প্রকাশ করল,
——— "এতটা ব্যাকুল কেন তুই? প্রশ্নে তোর একেকটা শব্দ তীরের মতো বিধে যায়। চুপচাপ চল আমাদের সাথে, ভয় করিস না, মেরে ফেলবো না তোকে।"
এমনি সময়েই দূরে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছায়ার ভেতর দাঁড়িয়ে মুগ্ধ। মহুয়ার প্রতি তীক্ষ্ণ নির্দেশ দিল,
——— "তুমি এগিয়ে যাও, আমি এখানেই অপেক্ষমাণ আছি। কোনোরকম সমস্যার সঙ্কেত পেলেই আমাকে জানাবে।"
——— "কোনো বিপত্তি ঘটবে না, স্যার! আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি, আঁখি রাজি হলেই কেবল এক নিমিষে সমাধান।"
——— "হুম, যাও।"
মহুয়া কোটের কোণ ঝেড়ে দৃপ্ত পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে তাদের পিছু ডাক দিলো,
——— "দাঁড়াও!"
কণ্ঠের প্রতিধ্বনি শুনে আঁখি, শান্ত, এবং নাঈম প্রত্যেকে পেছনে ফিরল। আঁখি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে মহুয়াকে দেখল; অজানা প্রশ্ন নিরীহ চোখে জমাট বেঁধে আছে। শান্ত ও নাঈম নির্বিকার, তাদের মধ্যে কোনো আবেগের ঢেউ নেই। কিছুক্ষণ পর, শান্তের ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের সূক্ষ্ম হাসি খেলে গেল, শীতল কণ্ঠে বলল,
——— "তো, সিআইডির কু'কু'রগুলো আমাদের অনুসরণে নামল নাকি?"
মহুয়া এক রহস্যময় হাসি দিয়ে তাদের সামনে অগ্রসর হলো। শান্ত ও নাঈমের মুখে কোনো দৃশ্যমান আবেগ নেই; যেনো নির্দিষ্ট কোনো পূর্বাভাসেই প্রস্তুত তারা, পূর্ব পরিকল্পিত কৌতুক তাদের ঠোঁটের কোণে আড়াল হয়ে আছে। আঁখির মন সেইসব ইঙ্গিতের কোনো রহস্যভেদে ব্যর্থ, তবু মনের দ্বিধা ঢেকে নিজের চঞ্চলতা সংযত করার চেষ্টা করে চলল।
মহুয়া এগিয়ে এসে আঁখির চোখের গভীরে এক অদৃশ্য টান অনুভব করল এবং অত্যন্ত মৃদু অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
——— "তোমার সাথে আমার কিছু নিবিড় কথা আছে। এই দিকে একবার এসো।"
আঁখি অদৃশ্য দ্বিধার বৃত্তে আবদ্ধ, মনের কৌতূহল বারংবার শান্ত ও নাঈমের মুখের আবেগহীন রেখায় কোনো অর্থ খুঁজে ফেরে। দাঁড়িয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যখানে, একদিকে নাঈমের নিস্তব্ধতা, অন্যদিকে শান্তর কঠোরতর সুর তাকে অনিশ্চয়তার অন্তঃস্থলে ফেলে দেয়। শান্ত একটুখানি তাচ্ছিল্য মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
——— "তা আমাদের বোনের সাথে এমন কি অভিপ্রায়? শুনি তো!"
মহুয়া অনাবিল হাসি দিয়ে সপ্রতিভ কণ্ঠে প্রতিউত্তর করল,
———" সে তো কেবল আপনাদের বোনকেই বলবো!"
আঁখির ভ্রুতে ক্রমাগত বিরক্তির ছাপ স্পষ্টতর হলো, কেননা এ রহস্যের ছায়ায় তার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে চায়। শান্তর দিকে তাকালে চোখের নিরুচ্চারিত সম্মতি তার মনে সামান্য প্রশান্তি এনে দেয়। স্ফীত কণ্ঠের কোনো উত্তর ছাড়াই আঁখি মহুয়ার দিকে তাকায়। মহুয়া অতি স্নিগ্ধভাবে আঁখির হাত ধরে বলল,
——— "এসো, আমার সাথে কিছু ক্ষণ নির্জনে।"
এ বাক্যের অবসানে তাকে মৃদু স্পর্শে ভিন্নপথে চালিত করলো, সামান্য দূরত্বের ব্যবধানে।
অন্যদিকে নাঈম প্রশ্নবোধে শান্তকে নিবিষ্ট কণ্ঠে বলল,
——— "ওকে এখানে এনে ভুল করিনি তো?"
শান্ত, তাদের দিকে চোখ নিবদ্ধ করল, এক দীর্ঘশ্বাসে নিরাসক্তভাবে উত্তর দিল,
———" এতকাল অস্বাভাবিকতায় নিমজ্জিত ছিলাম; তবে আজ সামান্য স্বাভাবিকতার স্পর্শে নিমগ্ন হতে দোষ কোথায়?"
নাঈম তখনও দ্বিধান্বিত মুখে বলল,
——— "তবু তো সিআইডি! বিশ্বাস করতে নারাজ মন।"
———" তুই কি আমাকেও তোর মতো গাধা ভাবিস? তাদের বিশ্বাস করবো? আমি শুধু এসেছি, যেন কারো মুখে হাসির ক্ষুদ্র রেখা ফুটে।"
নাঈম নিঃশ্বাসের ভারমুক্ত করল,
——— "মহুয়া এখানে উপস্থিত, তাহলে মুগ্ধও হয়তো আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।"
——— "ও থাকবেই নাই বা কেন? ও তো তাদের নেতা!"
———" তাকে সহ্য হয় না আমার! এমন বিষাক্ত সত্ত্বার পাশে এতক্ষন কেমন করেই বা স্থির থাকব?"
——— "এ নিয়ে আমার নিকট কেন আসিস? আমিও তো তার ছায়াটুকু পর্যন্ত সহ্য করি না। তবে, মাঝে মাঝে কিছুকে প্রাপ্তির জন্য কিছু বিসর্জন দিতেই হয়। আজ, হয়তো ওই একফোঁটা হাসির জন্য আমাদেরই হাসি বিসর্জন দিতে হবে। কী বলিস?"
নাঈম শূন্যদৃষ্টিতে বলল,
——— "তুই নিশ্চিত আঁখি সম্মত হবে?"
——— "সে না হলেও আমাদের উপস্থিতি তার জন্য যথেষ্ট।"
__
আঁখি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মহুয়ার অভিব্যক্তির রহস্য আবিষ্কারের প্রয়াসে নিবদ্ধ। মহুয়া, আঁখির স্নিগ্ধ গালে আলতো স্পর্শ রেখে কোমল অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
——— "আজ সিআইডি পরিচয়ে নয়, এক বড় বোন হয়ে তোমার সম্মুখে উপনীত হয়েছি! বিনীত প্রার্থনায় এসেছি তোমার কাছে। জানাও তো, গ্রহণ করবে কি এ অনুরোধ?"
আঁখি এ ধরনের বাক্যের অন্তর্নিহিত অর্থ অবলোকনে খানিক বিভ্রান্ত, তবুও বলল,
——— "হ্যাঁ, ম্যাডাম! বলুন?"
মহুয়া মৃদু তিরস্কারে বলল,
——— "তোমাকে বলেছি, আমাকে ‘আপু’ বলে ডাকতে!"
আঁখি নিঃশব্দে হাসল, চোখে ব্যঙ্গের চপলতা ফুটিয়ে বলল,
———" ম্যাডাম এই উপাধি তো আপনার ব্যক্তিত্বের মুকুটে শোভা পেয়েছে! এমন প্রাপ্যকে অবহেলা করা প্রজ্ঞার বিপরীতে। যাহোক, বলুন আপু, কেমন করে সহায় হতে পারি?"
মহুয়ার চোখে তখন অসীম নিবেদন, অগাধ বেদনার ছাপ, কাতর কণ্ঠে তার আবেদন উত্থাপন করল,
——— "কেবল আজকের এ রজনী, সামান্য এ ক্ষণিক মুহূর্ত, তোমার নিকট হতে কিছুটা সময় প্রার্থনা করি। দেবে কি, একটু?"
আঁখি বিস্ময়ের আবেশে উচ্চারণ করল,
———" সময়? আপনি, আমার নিকট সময় প্রার্থনা করছেন?"
মহুয়া চোখে এক অমলিন মায়া ছড়িয়ে নরম কণ্ঠে বলল,
——— "হ্যাঁ, আপু সোনা , তোমার সামান্য এক মুহূর্ত হয়তো কারো জীবনে এক টুকরো হাসির ঝিলিক এনে দিতে পারে!"
আঁখির কৌতূহল উদ্রেক হলো, প্রশ্ন করল,
——— "কার?"
মহুয়া হাসির রেখা মুখে ফুটিয়ে নিরুত্তর রইল, তার চোখে অজানা কাহিনীর আবরণ টানল।
দূর হতে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নীরবে প্রত্যক্ষ করছিল সকল কিছু, শ্যামবর্ণা কন্যার মৃদু মৃদু হাসির রেখার আড়ালে লুকানো গভীর অনুভূতিগুলোকে। বুকের অন্তর্গত সেই দাহ যেন সিগারেটের নীল ধোঁয়ায় আরও প্রজ্জ্বলিত হলো। একগুঁয়েমিতে আকাশপানে ধোঁয়ার সরল রেখা উড়িয়ে মৃদুস্বরে বলল,
——— "তোমার প্রতি এ নিষিদ্ধ আকাঙ্ক্ষাগুলোও যদি ধোঁয়ার মতো উড়িয়ে দিতে পারতাম, মেয়ে!"
চাঁদের শুভ্র আলোর দিকে দৃষ্টিপাত করল মুগ্ধ, ঠোঁটের কোণে এক তিক্ত হাসি ফুটে উঠল,
——— " তোর মতো, আমার অনুভূতি তেও এক কলঙ্কের কালিমা রয়েছে। একটি দাগ, এক অমোচনীয় পাপ।"
তারপর সেই দূরবর্তিনী শ্যামকন্যার দিকে দৃষ্টিসম্পাতে মগ্ন হয়ে আলতো হেসে বলল,
——— "আজ একটু অধিকার চেয়ে নিলাম, ভেঙে ফেললাম সেই অব্যক্ত নিয়ম। সামান্য সান্নিধ্য পাবো কি? এক মুহূর্তের দেখা? হোক না পাপ, আমি তো পাপেরই পরিচিত, তবে আরেকটি পাপ সংযোজিত হোক!"


Post a Comment

0 Comments

Close Menu