লেখিকাঃ আশা রোজমেরি
এক মাস পর..
সকাল সকাল করে এলাইসা আর এলিন এডমাইনকে সাথে করে রাজ্যে ফিরেছে।মায়া পরীর কথানুযায়ী এক মাসেই সব ফসল পরিপক্ক হয়েছে।রাজ্যের সকল প্রজাদের সাথে তারাও একত্রিত হয়ে ফসল তোলার জন্য রাজ্যে ফিরেছে।
এই এক মাস মন্ত্রী এডওয়াড রাজ্য দেখাশুনা করেছে।রাজ্যের খালি শস্য ভান্ডার পাহাড়ি অনুদানে চলেছে।এনথা, সমস্ত খবরাখবর আদান-প্রদান করতো এলাইসাকে।এডমাইনকে সাহায্য করার জন্য কেউ ছিলোনা।সেজন্য এলাইসা আর এলিন পাহাড়ে থেকে গিয়েছিলো।
রাজ্যে ফিরেই আগে বাবার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন রাজকন্যা।এলিন এডমাইনকে নিয়ে চলে গেছে মাঠে।সেখানে দেখা গেলো মেনানও উপস্থিত হয়েছে।কিছু সময় গড়ানোর পরই এলাইসা এসে যোগ দিলো।ডিওডি,এঞ্জি আর মেরিটাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো রন্ধনশালায়।দুপুরের আহারে মহাভোজের আয়োজন করার জন্য।
সবাই কাজ করে হাপিয়ে গেলো।দরদর করে ঘাম ঝরছে।তখনই জোর বাতাস শুরু হলো।সবাই চোখ বন্ধ করে বাতাস উপভোগ করলো।শরীর যখন ঠান্ডা হয়ে এলো,তখন তারা চোখ মেললো।তাকিয়ে দেখে বাতাসে মায়া পরী ভেসে বেড়াচ্ছে।এ বাতাস তারই যাদু কাঠির ছোঁয়া।লোকবল দিয়ে সবাইকে খাবার বিতরণ করা হলো।খাবার শেষে সবাই আবার এক যোগে কাজ আরম্ভ করলো।
তিন দিন এভাবে অনবরত কাজ চললো।রাজ্যের গোলা ভরে উঠলো।তারপর তারা কিছু সংখ্যক লোক পাড়ি জমালো পাহাড়ে।সেখানে হেনরি,এট্রেসিকে নিজের বোন বলে পরিচয় দিলো। তারা সকলে ফসল কাটায় লেগে পরলো।রাজ্য থেকে তাদের জন্য খাবার রান্না করে পাঠানো হয়েছে।এছাড়াও মায়া পরী ফলমূল এর ব্যবস্থা করেছে তার মায়া বন থেকে।জুম চাষের সকল ফসলি ঘরে তুলে সকলে আবার রাজ্যে ফিরেছে।রাজ্য আবার হাসি-খুশিতে ভরে উঠলো।রাজা এডিডাস একটি বিশেষ দিন দেখে আধিবাসীদের রাজ্যের একটি অংশ ঘোষণা করলেন।সেখানে হেনরি,এট্রেসি,এডমাইন ছিলো উজ্জ্বল নক্ষত্র।তাদের উদারতার জন্য আজ এমন একটি দিন পেলো পাহাড়ি লোকজন।
কিছুদিন পর
মেরিটাকে দিয়ে, মহারাজ এলাইসাকে তার রুমে ডেকে পাঠালেন।তারপর বললেন,
--আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে মা এলাইসা।আমি বেঁচে থাকাকালীন তোমার শুভ পরিনয় দেখে যেতে চাই।
"এডমাইন এর চিঠির কথা মনে পরলো এলাইসার।সে রাজ্যে ফিরেই এডমাইন এর চিঠিটা পড়েছে। এই সুযোগে তার ভালো লাগার কথা বাবাকে জানিয়ে দিলো",
--আমার এমন দুর্দিনে এডমাইন সাথে ছিলো।ও খুব সাহসী,উদার এবং যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী।এছাড়াও আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি।আমি জীবনে এমন একজনকে চাই বাবা।যদি তোমার আপত্তি না থাকে।
মহারাজ খুব খুশি হলেন।তার মেয়ে একজন বিশ্বাসযোগ্য ভরসার মানুষ পেয়েছে।তিনি বললেন,
--শুভ কাজে দেরি কিসের।কালই সব আয়োজন করো।আর রাজ্যদূত এর মাধ্যমে এডমাইন এর বাড়িতে খবর পাঠিয়ে দাও।তারা যেনো পাহাড়ি সমস্ত লোকজন নিয়ে কাল সন্ধ্যার মধ্যে প্রাসাদে উপস্থিত থাকে।
মহারাজের কথানুযায়ী এডমাইনদের খবর পাঠিয়ে দেওয়া হলো।সেই সাথে মায়া পরীকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালো রাজকন্যা এলাইসা।
রাতে এলাইসার ঘুম হলোনা।মা'এর কথা বড্ড মনে পরলো।দু'চোখ বেয়ে পানি ধারা বয়ে চললো।তার ব্যথা যেনো এনথাকেও ছুঁয়ে গেলো।এনথার মন ব্যথাতুর হয়ে উঠলো।এর সাথে সে তার জীবনও জড়িয়ে আছে।একটি বিরহ কাতর রাত শেষে নতুন জীবনের সূর্যদয় হলো।
সকাল হতেই প্রাসাদ সাজাতে লোক এলো।সারা দিন কাজ চললো।প্রাসাদের প্রতিটা কোণা ফুলে শোভিত হয়েছে।সন্ধ্যা নামতেই রাজ্য সেজেছে রকমারি আলোতে।এলাইসা আর এডমাইন এর জন্য স্বর্ণখচিত দুটি কেদারা এক সাথে রাখা হলো।আদিবাসীরা রাজ্যে পৌঁছানো মাত্রই তাদের রাজ্য থেকে রাজকীয় পোশাক উপহার দেওয়া হলো।সবাই নতুন সাজে নিজেদের বার বার দেখতে লাগলো।হেনরি,এট্রেসিকে আলাদা ভাবে আরো জাঁকজমকপূর্ণ দামী পোশাক দেওয়া হলো।এবং মেরিটা নিজের হাতে তাদের সাজালো।সাজানো শেষে সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না।মহারাজের রুমে দৌঁড়ে গেলো।রানী এথিনার বাধানো ছবিটি আরো একবার দেখে নিলো।তারপর আবার নিজের রুমে গেলেন।এথিনাকে জড়িয়ে ধরলেন।
--আপনি বেঁচে আছেন মহারানী।আপনার অভাবে মহারাজ এর জীবন শেষের পথে।
এট্রেসি কিছুই বুঝতে পারলো না।তখন মেরিটা অতীত সম্পর্কে সব জানালো।অতীত শুনে হেনরি এবার এট্রেসির আসল সত্যি বললো,
--মিস মেরিটা, আমি উনাকে আমার বোন পরিচয় দিয়েছিলাম।হ্যা, উনি আমার বোনই।কিন্তু, আমি আর এডমাইন তাকে নদীর কিনারে পেয়ে ছিলাম।কোনো এক ঝড়ের রাতে ভেসে এসেছিলো।এডমাইন তখন ছোট।
হেনরির কথা শুনে মেরিটার সন্দেহ রইলো না।রানীকে নিয়ে গেলো মহারাজ এর কাছে।আরো উপস্থিত হলো রাজকন্যা এলাইসা,মন্ত্রী,হেনরি,এডমাইন।রানীকে চোখের সামনে দেখে মহারাজ বললেন,
--আমার শেষ সময়ে তুমি ফিরে এলে এথিনা
সবার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠলো।রাজার আকুতি দেখে মেরিটার অতীত বর্ননা এথিনার চোখে ভাসতে লাগলো।তিনি তার ছবিটা হাত দিয়ে ধরে দেখলেন।এটা তো আমি।আমার এই রূপ এতো দিন পাহাড়ি সাজে বন্ধি ছিলো।তিনি কেঁদে উঠলেন নিজের স্বামীর এমন অবস্থা দেখে।এর মাঝেই এনথা নিজের পরী রুপে ফিরে এলেন।সবাই দেখে অবাক।এতো পরী রানী রোজালিয়া।
"রোজালিয়া তার অভিশাপের কথা বললো।ডা*ইনী আন্দ্রেয়া তাকে মারতে পারেনি।তাই যাদুবলে পাখি বানিয়ে রেখেছিলো।আর বলেছিলো যেদিন তার অবস্থানরত জায়গায় কোনো হারানো মানুষ ফিরে আসবে এবং স্মৃতি ফিরে পাবে,সেদিন সে তার আসল রুপ ফিরে পাবে।আসল রুপ ফিরার আগে নিজের শক্তি প্রয়োগ করলে সাথে সাথে মৃ*ত্যু হতে পারে।তাও সে এলাইসার জন্য তার শক্তি প্রয়োগ করেছিলো।কিছুটা অসুস্থতা অনুভব করলেও তিনি জীবন হারাননি।রোজালিয়া সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
--জেসি, আমার মেয়ে মায়া পরীকে আক্রমণ করেছে।মায়া পরীর এখন সাহায্য প্রয়োজন।আপনারা অনুষ্ঠান শুরু করুন।আমি কিছুক্ষন পরেই ফিরে আসবো মায়া পরীকে সাথে নিয়ে ।এলাইসা,এলিন সাথে গেলো।এথিনা মেয়ের জন্য গর্বিত হলো।এডমাইনও পা বাড়ালো।
0 Comments