লেখিকাঃ তাবাসসুম কথা
চড় বসিয়ে দিয়েই জ্বিভে কামড় পরলো আমার। তুর্য ভাইয়া ধরেছে ভেবে চড় দিলাম কিন্তু পিছনে তো রুহান ভাইয়া দাড়িয়ে আছে। আজকে যে ফুপি আম্মুর আসার কথা ছিল আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ইশশ রে বেচারার ফর্সা গাল টা লাল হয়ে গেছে। রুহান ভাইয়া হ্যাবলা কান্তের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আর আমি একটা লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে আমার ধবধবে সাদা দাতগুলো দেখালাম।
রুহান ভাইয়া এখনও গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছেন দেখে তার গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে সরি চাইলাম। রুহান ভাইয়া আর কোনো প্রশ্ন না করে আমাকে জরিয়ে ধরলেন। রুহান ভাইয়ার এই কাজটা আমার কাছে চরম বিরক্তির মনে হয়। যখনই দেখা হয় জরিয়ে ধরে। মানছি ফুপি আম্মুরা খুব মডার্ন কিন্তু আমার এই জিনিসটা একদম পছন্দ নয়।
রুহান ভাইয়ার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছাদ থেকে নামতে শুরু করলাম। এখন আর ছাদে থাকা সম্ভব না। মাঝে মাঝে রুহান ভাইয়ার চোখ দুটো কেমন যেনো হয়ে যায়। ছাদ থেকে নেমে আসার সময় মনে হলো একটা ছায়ামূর্তি সেখান থেকে সরে গেলো। বাসায় অনেক মানুষ হয়তো কেউ ছাদে এসেছিল।
৭ দিন পর বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে ভাবা যায়। জোড়ে সোড়ে চলছে আয়োজন। আমাদের ছাদটা অনেক বড়। হলুদ সন্ধ্যা, মেহেদি, নাচ-গান সবটা ছাদেই হবে। বিয়েটা শুধু কমিউনিটি সেন্টারে পড়ানো হবে। বাড়ির বড়রা সবাই সবটাই সামলে নিচ্ছেন কিন্তু শপিং এর দায়িত্ব পড়লো ছোটদের কাঁধে। যদিও বলে দিয়েছে ছোটরা করবে। কিন্তু এই শপিং এর কাজে আমি কোথাও নেই। হিয়া আমাকে ঘেসতেও দেবে না কাছে। হিয়া শাকচুন্নিটা সবসময় এমন করে। এখনও তুর্য ভাইয়া আর বাচ্চা পার্টির সাথে চিপকে আছে হিয়া। আমাকে তো কেউ পাত্তাই দেয় না। ওরা পাত্তা না দিলে আমার বয়েই গেলো।
তাফসি আপুর হলুদে আমি নাচবো এই ফাঁকে প্র্যাক্টিস টা করে ফেলি। মোবাইলে গান প্লে করে মাত্রই নাচ শুরু করেছিলাম তখনই মনে হলো কেউ আমার ঘরের দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে। ছুঁটে গিয়ে দরজা খুলে কাউকেই পেলাম না। জানি না কি হচ্ছে। আবার ভুত-পেত্নির প্রকোপ বাড়ছে নাতো! বাড়লেও আশ্চর্যের কিছুই নেই। হিয়া শাকচুন্নি যতোদিন এ বাড়িতে আছে ওর আত্মীয়স্বজনরা তো আসবেই দেখা করতে।
এ বাড়িতে এমনেই আমি সবার কাছে অবহেলিত। দেখলে মনে হয় আমাকে এরা কুড়িয়ে পেয়েছে। এখন তুর্য ভাইয়ার আগমনে আমি আরো একা পরে গেছি। আগে তো মাঝে মাঝে নিলি মিলি আসতো চকোলেট ভাগ করতে। যদিও ওদের অর্ধেক চকোলেট আমিই খেয়ে নিতাম। এখন সেটাও আসছে না। কি আর করার নিজের চকোলেট গুলোই খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
।
।
মাঝরাতে মনে হচ্ছে কেউ আমার গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব হচ্ছে। কিন্তু আমার উঠার কোনো ইচ্ছাই নেই। ঘুমপরী খুব যত্নসহকারে আমাকে নিজের সাথে আঁকড়ে ধরে আছে। হঠাৎ থুতনিতে কেউ একটা কামড় বসিয়ে দিলো মনে হচ্ছে। আমি চট করে চোখ খুলে ফেললাম। চিত্কার করতে যাবো তার আগেই কেউ আমার ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নিলেন। অন্ধাকার ঘরে আমি কিছু দেখতেও পাচ্ছি না আর লোকটাকে আমার উপর থেকে সরাতেও পারছি না। এতো শক্ত করে ধরে রেখেছে আমাকে আমি এক ইঞ্চিও নড়তে পারছি না।
লোকটা মনের সুখে আমার ঠোঁট দুটো চুষে নিচ্ছেন। আবার কামড়ও দিচ্ছেন। এদিকে আমার নিশ্বাস আটকে আসছে। অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। আর মিনিট দুয়েক এভাবে থাকলে মনে হয় আমার পরাণ পাখি উড়াল দেবে। আমার নিশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে যাবে ভাব তখন লোকটা আমার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিলেন। ঠোঁটা ছাড়তেই আমি হাপানো শুরু করলাম। আমি জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম তখন লোকটা আমার উপর থেকে উঠে গেলেন।
আমি লাফ দিয়ে উঠে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে নিলাম। কিন্তু আশ্চর্য ঘরে কেউ নেই। মুহূর্তেই কেউ ঘর থেকে কিভাবে বের হতে পারে। দরজাও ভিতর থেকে লক করা। তখন আমার নজর পরলো ব্যালকোনির দিকে। ব্যালকোনির কাঁচ খোলা। তাহলে কি কেউ ব্যালকোনি দিয়ে ঘরে ঢুকেছিল! দৌড়ে ব্যালকোনিতে গেলাম কিন্তু না আশে পাশে কেউ নেই। তবে কি এতোক্ষণ আমার সাথে যা যা হয়েছে সব স্বপ্ন!!
রাতে আর ঘুম হলো না আমার! ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে আসতেই হিয়া ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে। আমি বুঝি না আমার সাথে এই মেয়েটার কিসের শত্রুতা। হিয়ার ডাকাডাকি সহ্য করতে না পেরে উঠে পরলাম। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের মুখ দেখতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। আমার ঠোঁটের কোনায় রক্ত শুকিয়ে আছে। তারমানে কাল রাতে আমি ওসব স্বপ্নে দেখি নি। আসলেও কেউ আমার সাথে এমনটা করেছিল।
অজানা একটা ভয় আমাকে গ্রাস করে নিলো। তিনতলার ঘরে কে এসেছিল এতো রাতে! আর আমার সাথে ওসব কেনো করলো! অনেক ভয় করছে। আমার শত্রু কে হতে পারে! আচ্ছা লোকটা কি রুহান ভাইয়া! না না ছিহ! এসব আমি কি ভাবছি। রুহান ভাইয়া অনেক ফ্রি মাইন্ডেড কিন্তু এমন না।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেরই কান্না পাচ্ছে। আমার সুন্দর ঠোঁট টা কেটে দিয়েছে। কিন্তু কথা হলো আমি বাইরে যাবো কিভাবে! সবাই দেখলে হাজার টা প্রশ্ন করবে। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম কেউ আছে কি না। কাউকে আশেপাশে না দেখে ছুঁট লাগালাম খাবার টেবিলে। খাবার প্রায় শেষ পর্যায়ে তখনই সেখানে তুর্য ভাইয়া এলেন। আর ২ মিনিট পরে এলে কি এমন ক্ষতি হতো তার!
-- কিরে পুচকি! কি করছিস?
আমি মাথা নিচু করে আপন মনে ব্রেড গিলে যাচ্ছি।
-- এই এদিকে তাকা তো। তোর ঠোঁট এই জায়গায় লাল কেনো রে? তোর বয়ফ্রেন্ড আছে তাই না!
-- কি সব বাজে বকছেন! ঠোঁট লালের সাথে বয়ফ্রেন্ডের কি সম্পর্ক!
-- আমাকে কি নিজের মতো পুচকি ভাবিস! জানিস আমার কতোগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে! আমার গার্লফ্রেন্ডদের ঠোঁটও অনেক সময় লাল থাকে।
তুর্য ভাইয়ার মুখে তার গার্লফ্রেন্ডদের কথা শুনে কেনো জানি না আমার কষ্ট হচ্ছে। বুকের বা পাশে নিজের অজান্তেই চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।
-- জানিস তো ঠোঁটের কোণায় লাল কেনো হয়!
-- হুম।
-- কিভাবে জানলি!
-- মুভি তে দেখেছি।
-- এমনি এমনিই কি তোকে পুচকি বলি। তুই মুভিতে দেখেছিস আর আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের ঠোঁটের স্বাদ নিয়েছি।
তুর্য ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। এর কারণ আমার জানা নেই। তার কথা আর শোনার ইচ্ছে হলো না তাই উঠে ঘরে চলে গেলাম। আচ্ছা একদিন হয়েছে যার সাথে দেখা হয়েছে সেই মানুষটার জন্য এই অনুভূতির অর্থ কি! আমি কি তুর্য ভাইয়াকে নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করছি! হ্যাঁ তাই হবে। আর তাকে নিয়ে ভাববো না। কলেজে যেতে হবে, সামনে পরীক্ষা ৩ দিন পর আর যেতে পারবো না। বিয়ের ফাংশন শুরু হলে আব্বু আর কলেজে যেতে দেবে না।
কলেজের পোশাক পরে দুই বেনুণী করে কাধে ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। আজ অবশ্য হালকা একটু লিপষ্টিকও পরেছি। ঠোঁটের কাটা দাগটা ঢাকার জন্য। প্রতিদিন এই সময় এই রাস্তায় রিকশার রেস হয় আর আজকে একটা রিকশাও নেই। এতোদূরে কলেজ হেটে যেতে গেলে পায়ের দফারফা শেষ হয়ে যাবে। আনমনেই কথা গুলো ভাবছিলাম তখন সামনে একটা বাইক এসে ভিরলো।
বাইকে তুর্য ভাইয়া বসে আছেন। কিন্তু উনি বাইক পেলেন কোথায়!
-- উঠে বস পৌঁছে দিয়ে আসছি।
তুর্য ভাইয়ার প্রতি অনেক অভিমান হচ্ছে, তার এতোগুলো গার্লফ্রেন্ড থাকতে আমাকে কেনো বাইকে বসাবেন! কিন্তু এই অভিমানই বা কেনো হচ্ছে! তার আর আমার সম্পর্ক শুধুই কাজিন হিসেবে। অন্য কোনো সম্পর্ক তো নেই আমাদের। তুর্য ভাইয়া তুরি বাজিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করলেন,
-- বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো না। আর একবার বলবো তবুও না এলে একাই যাবি এই রোদের মধ্যে।
কিছু না বলে বাইকে উঠে বসে পরলাম। এতোদূর হাটার একদম ইচ্ছে নেই। এর আগে বাইকে উঠেছি বলে মনে পরছে না। তাই ভয় হচ্ছে খুব যদি পরে যাই। তুর্য ভাইয়া যেমন মানুষ, পরে গেলেও তো ধরবে না। আমার জায়গায় তার অন্য কোনো গফ হলে ব্যাপারটা ভিন্ন হতো।
বাইক স্টার্ট দিতেই খেলাম একটা বিশাল ধাক্কা তুর্য ভাইয়ার সাথে। দোষটা আমারই ছিল। হাজারটা চিন্তায় আমি ভালোমতো বসতেই পারি নি।
-- এই পুচকি নাম তুই বাইক থেকে। নিজে তো মরবিই সাথে আমাকেও জেল এর ভাত খাওয়াবি।
-- না জেল এর ভাত খেতে হবে না। জেল এ শুকনো রুটি আর একটা পেঁয়াজ দেয়।
-- ঠাঁটিয়ে একটা চড় মারবো। অনেক বেশি বুঝিস তাই না। চুপচাপ ধরে বস।
তুর্য ভাইয়ার ধমকে আমি চুপসে গিয়েছি। এই লোককে বিশ্বাস হয় না, যদি সত্যি মেরে দেয়। কোনো কথা না বলে তুর্য ভাইয়াকে পিছন থেকে ধরে বসলাম। জীবনে প্রথমবার বাইকে উঠেছি। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। আমার সব বান্ধবীরা বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাইকে ঘুরতে যায় আর আমাকে গল্প শোনায়। আমিও আজকে বাইকে উঠেছি। আমিও সবাইকে শোনাবো।
কলেজের গেইটে এসে তুর্য ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দিলেন। গেইটের আশেপাশের মেয়েরা কেমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তুর্য ভাইয়াকে। এতোক্ষণে ভাইয়ার দিকে ভালোমতো তাকিয়ে দেখলাম। তাকে দেখে এবার সত্যি আমি ক্রাশ খেলাম। অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে দেখতে। কালো জিন্সের সাথে হোয়াইট শার্ট পরে হাতা ফোল্ড করে রেখেছেন, চোখে সানগ্লাস। সব মিলিয়ে অসাধারণ। কিন্তু সব মেয়েরা তুর্য ভাইয়ার দিকে নজর দিচ্ছে। তুর্য ভাইয়াকে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বিদায় করে আমি ভিতরে ঢুকে গেলাম।
আমার বান্ধবীরা ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখে ভেবেই নিয়েছেন সে আমার বয়ফ্রেন্ড। আচ্ছা তুর্য ভাইয়া যদি সত্যি আমার বয়ফ্রেন্ড হতো!! কেমন হতো! এতো হ্যান্ডসাম একটা বফ আমার থাকলে আমার সব বান্ধবীরা জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যেতো।
।
।
।
আজকে রিকশাওয়ালাদের কি হয়েছে কে জানে। একটা রিকশাও নেই। একা একা হেটে আসছিলাম তখন নজর পরলো রাস্তার অপর পাশে। দুইটা ছেলে দাড়িয়ে স্মোক করছে। তাদের দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না। এদিকে রাস্তাটাও কেমন ফাঁকা। ভয় ভয় করছে, তাই দ্রুত পদক্ষেপে চলছি। কিন্তু বলে না যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ছেলে দুইটা আমার পিছনেই আসছে। শুধু যে পিছনে আসছে তাই নয়, বাজে মন্তব্যও করছে। ভয়ের তীব্রতায় আমার কান্না পাচ্ছে। আমি কোনো কিছু না ভেবে দৌড়ানো শুরু করে দিলাম। কিন্তু জন্মগত গোলটুশি হওয়াতে দ্রুত দৌড়াতেও পারছি না। ছেলে দুটো প্রায় ধরে ফেলেছে আমাকে। তখনি মনে হলো আমি একটা দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম। দেয়ালটা আমাকে জরিয়ে ধরেছে কিন্তু দেয়াল কিভাবে ধরলো! মুখ তুলে তাকাতেই দেখি কালো হুডি পড়া একটা লোক আমার সামনে দাড়িয়ে। তার মুখটা দেখতে পারলাম না মুখে মাস্ক থাকার দরূণ। কিন্তু যতোটুকু বুঝতে পারলাম লোকটা আমার সাহায্য করার জন্যই এসেছেন। কারণ লোকটা ছেলে দুইটাকে আচ্ছামত ধোলাই দিচ্ছে। কিন্তু আমার ভয় এখনও কাটে নি। এই লোকটাও যদি ওদের মতোই হয়! না না এইখানে আর থাকা যাবে না। আমি পিছন থেকেই দৌড়ে পালালাম।
বাসায় এসে রুমের দরজা লক করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাপাচ্ছি। দুদিন ধরে আমার সাথে এতো আজিব আজিব ঘটনা কেনো ঘটছে! প্রথমে তুর্য ভাইয়া তারপর আবার রাতের লোকটা এখন আবার এই সমস্যা। আমি পিচ্ছি একটা মানুষ এতো সমস্যা কিভাবে সামাল দেবো!
ব্যালকোনিতে গিটার হাতে বসে আছে তুর্য। আকাশে মেঘ করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। আজ তুর্যর মনটা অনেক ভালো। খুব খুশি খুশি লাগছে। মনে হচ্ছে হাজার বছরের পিপাসা মিটতে শুরু হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তের বাতাস শুরু হয়ে গেছে। প্রাণ খুলে সেই বাতাস উপভোগ করছে তুর্য।
হঠাত পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরায় চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়ে তুর্য। জরিয়ে ধরা ব্যক্তিটির স্পর্শ অনুভব করতে চায় সে। কিন্তু স্পর্শগুলো খুব অপরিচিত মনে হচ্ছে। চোখ খুলে নিজের ছাড়িয়ে পিছন ঘুরতেই দেখে রুহি মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে। রুহিকে দেখে তুর্য ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে। হয়তো চিনতে পেরেছে সে।
-- কি হলো তুর্য! এভাবে কি দেখছো! চিনতে পারো নি বুঝি?
-- রুহি! না চেনার কি আছে। ফুপি আম্মু তো কালকেই এসেছেন তুমি আজকে এলে যে!
-- আব্বুর সাথে এসেছি। আম্মু আর ভাইয়া কালকেই এসে পরেছিল।
-- হুম। বসো আমি আসছি।
-- কোথায় যাচ্ছো? তোমার সাথে দেখা করতেই তো এলাম।
-- দেখা তো হয়ে গেছে। চোখের তৃষ্ণা মেটাতে যাচ্ছি।
তুর্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
চারিদিক অন্ধকার হয়ে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সময় টা বিকেল হলেও মনে হচ্ছে সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত চলছে। তুর্য গিটার হাতে ছাদের দরজার সামনে এসে থমকে যায়। সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই বৃষ্টির ধারায় কোনো এক পরী তাদের ছাদে দাড়িয়ে ভিজছে। সাদা চুড়িদার পরে একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। মেয়েটা অন্যদিকে মুখ করে দাড়িয়ে থাকায় তুর্য মুখটা দেখতে পারছে না। সাদা চুড়িদারটা বৃষ্টির পানিতে ভেজায় মেয়েটার শরীরের প্রায় প্রতিটা ভাঁজ তুর্যর চোখে পরছে। তুর্য বারবার দৃষ্টি সরাতে চাইছে কিন্তু কোনো এক অজানা আকর্ষণ তাকে টানছে মেয়েটার দিকে।
মেয়েটা সম্ভবত মাথা নাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা মুখে নিচ্ছে আর পিছন থেকে তার লম্বা চুলগুলো কোমড়ে বারি খাচ্ছে। তুর্যর খুব ইচ্ছে করছে একটা বার মেয়েটাকে ঘুরিয়ে তার মুখটা দেখতে। তুর্য গিটার টা নিচে রেখে সামনের দিকে আগাচ্ছে। সে নিজেও জানে না সে কি করতে যাচ্ছে।
মেয়েটার একদম কাছে গিয়ে দাড়িয়ে আছে তুর্য। ভিজে একাকার হয়ে গেছে কিন্তু অপেক্ষা করছে কখন মেয়েটা পিছন দিকে ঘুরবে আর সে তাকে একনজর দেখবে।
0 Comments