লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা
“আপা, আপা, আমার মোহ আপা।”
অনবরত চিৎকার করতে করতে মোহ'র দিকে ছুটে আসতে থাকে তটিনী। মোহ তখনও নির্বাক। আদরের ছোট বোন কে এতদিন পর দেখে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। প্রভা হটাৎই খেয়াল করে ছুটে আসা তটিনীর দিকে। রাস্তাটা চওড়া হওয়ায় তটিনী রাস্তার চলমান গাড়ি গুলো ক্রস করে এপারে আসার চেষ্টা করছে। তটিনীর ক্রন্দনরত আঁখিজোড়া তখনও মোহ'র দিকে নিবদ্ধ। প্রভা চমকায়। একটা ট্রাক তীব্র গতিতে তটিনীর দিকে ধেয়ে আসছে। তটিনীর সেসব দিকে খেয়াল নেই। সে তো তার আপাকে একটিবার ছোঁয়ার ইচ্ছা নিয়ে ছুটে চলেছে।
“মোহ! ওই ট্রাক টা মেয়েটাকে মেরে দেবে।”
প্রভার আতংকিত কণ্ঠ। প্রভার কথা অনুযায়ী পাশে তাকাতেই দেখতে পায় ট্রাক টা তটিনীর একদম কাছে চলে এসেছে। মোহ'র চোখে মুখে আচমকা ভয় ফুটে ওঠে। আতংকিত কণ্ঠে ডাকে তটিনীকে।
“তটিনী, সরে যা।”
বোনের এমন চিৎকার শুনে তটিনী মোহ'র দিকে তাকায়।এতক্ষনে সে খেয়াল করে ট্রাক টি তাকে ধাক্কা মারতে যাচ্ছে। তটিনী মোহ'র দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। হটাৎ ভীষন জোরে একটা শব্দ হয়। আর তার সাথে জোড়ালো হয় মোহ'র চিৎকার।..
পুরো রাস্তা রক্তাক্ত। তটিনীর রক্তে ভেজা শরীর বুকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটতে থাকে মোহ। তার পিছন পিছন প্রভা ও দৌড়ে চলেছে।
“মোহ, পাগলামি কোরো না। হাসপাতাল অনেক দূরে। হেটে বা দৌরে যেতে সময় লাগবে। চলো কোনো গাড়ি করে যাই। এত দেরি করলে মেয়েটার ও কিছু হয়ে যেতে পারে।”
প্রভার কথা শুনে মোহ থামে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে সে বলে,
“গাড়ি দেখো একটা। আমার বোনকে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি ওর কিছু হতে দেবো না।”
প্রভা মোহ'র কথা মতো একটা গাড়ি থামায়। আর তটিনীকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
_______________
ইতিমধ্যে ভার্সিটি রোডে পুলিশ এসে গেছে। ট্রাক ড্রাইভার তটিনীকে ধাক্কা দিয়েই পালিয়ে গেছে। পুরো রাস্তা এখন পরিষ্কার করা হচ্ছে। আশেপাশে বহু মানু্ষের ভীড় জমেছে। সেই ভীড়ের মধ্যে উষ্ণ ও উপস্থিত আছে। তটিনীর এক্সিডেন্ট এর দশ মিনিট পর সে ভার্সিটি থেকে বের হয়েছে। ততক্ষণে মোহ ও প্রভা তটিনীকে নিয়ে চলে গেছে বিধায় উষ্ণ মোহ কিংবা তটিনীর কোনো দেখা পায় নি।
“এক্সকিউজ মি, এখানে কার এক্সিডেন্ট হয়েছে তা একটু বলা যাবে?”
আচমকা পাশ থেকে কারো গলা শুনে উষ্ণ পাশে তাকায়। তাদের ক্লাসের টপ স্টুডেন্ট ও রাজনীতিবিদ তন্ময় প্রশ্নটা করেছে। তন্ময়ের প্রশ্ন শুনে একজন কন্সটেবল এসে বলে,
“জানি না ভাই। যতদূর জানি একটা মেয়ে ছিল। তার নাম, পরিচয় জানি না। আমরা আসার আগেই তাকে নাকি আরো দুজন মেয়ে নিয়ে গেছে।”
“ওহ আই সি।”
মুখে চিন্তার ছাপ এনে কথাটা বলে তন্ময়। সে আদৌও চিন্তিত ছিলো কিনা সেটা ধরতে পারে না ওই কন্সটেবল। তবে উষ্ণ ঠিকই বোঝে এসব শুধুই তন্ময়ের নাটক। হুট করে আরো কয়েকটা স্টুডেন্ট বলে ওঠে,
“স্যার, ওই দুটো মেয়ে হলো চতুর্থ বর্ষের মোহ এবং প্রভা। আর যেই মেয়েটার এক্সিডেন্ট হয়েছে সে মনে হয় ওদের মধ্যে কারো বোন। কারণ মেয়েটা কাকে যেন আপা আপা ডাকছিল।”
মোহ! নামটা কানে পৌঁছাতেই উষ্ণ তড়িৎ গতিতে ওই স্টুডেন্ট গুলোর দিকে ফিরে তাকায়। উষ্ণের অভিপ্রায় বুঝতে পেরে পাশ থেকে মোহ'র ক্লাসের একটা মেয়ে বলে ওঠে,
“ভাইয়া, মোহ মেয়েটার প্রতি দুর্বল হবেন না। ও নিশ্চিত আপনাকে ফাসিয়েছে। ওই মেয়েটা একদম ভালো না। সিনিয়র রা বলে ও নাকি প*তি**তা।”
মেয়েটার কথা শুনে উষ্ণ একটু অবাক হয়। স্টুডেন্ট গুলো তো দুজন মেয়ের কথা বলেছিল। মোহ ও প্রভা। তাহলে এই মেয়েটি শুধু মোহ'র কথা বললো কেন?
“ঘটনাস্থলে তো দুজন মেয়ে ছিল। মোহ এবং প্রভা। তাহলে তোমার কেন মনে হলো আমি মোহ'র কথা ভাবছি? আমি তো প্রভার কথাও ভাবতে পারতাম।”
“প্রভার তুলনায় মোহ অনেক বেশি সুন্দর ভাইয়া। সবাই ওকেই পছন্দ করে। তাই ভাবলাম আপনিও ওর কথা ভাবছেন।”
মেয়েটির কথা শুনে উষ্ণ আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ ওই যায়গা থেকে প্রস্থান করে।
তটিনীর এক্সিডেন্ট এর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যায় তৌফিক ইসলাম ও আরিফা বেগম। একে তো ছোট মেয়ের এমন মর্মান্তিক অবস্থা তার উপর বড় মেয়ের ফিরে আসা।
কাঁচা হলুদ জামাটা তটিনীর রক্তে ভিজে জরজবে হয়ে গেছে। মোহ একটুও কাঁদছে না। চোখ মুখ কঠিন করে এক যায়গায় স্থির হয়ে বসে আছে। সহপাঠীর এমন অবস্থা দেখে প্রভার একটুও ভালোলাগছে না। হটাৎ করে তৌফিক ইসলাম ও আরিফা বেগম ছুটে এসে কাঁদতে শুরু করে। মোহ কে দেখে থমকে যায় তারা। রক্তে ভিজে গেছে একেবারে। চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে। আরিফা বেগম মোহ কে জড়িয়ে ধরে আরো জোড়ে কাঁদতে থাকে। তবুও মোহ'র কোনো ভাবান্তর হয় না। সে নিজ ভাবনাতে স্থির।
তটিনীর কেবিন থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসতেই তৌফিক ইসলাম তার কাছে যান।
“ডাক্তার সাহেব, আমার মেয়ে কেমন আছে?”
“ওনার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল। শরীর থেকে অনেক ব্লাড লস হয়েছে। ইমার্জেন্সি ব্লাড লাগবে। আর ওনার ব্লাড গ্রুপ অনেক রেয়ার যা আমাদের ব্লাড ব্যাংকে নেই। আপনাদের পরিচিত কারো ব্লাড গ্রুপ এ-নেগেটিভ হলে যোগাযোগ করে দেখেন।”
ডাক্তারের কথা শুনে তৌফিক ইসলাম চিন্তায় পড়ে যান। তার পরিচিত এমন কেউ নেই যার ব্লাড গ্রুপ এ-নেগেটিভ, তিনি স্ত্রীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন,
“তোমার পরিচিত এমন কেউ কী আছে, যার ব্লাড গ্রুপ এ-নেগেটিভ?”
স্বামীর কথা শুনে আরিফা বেগম মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে তার দিকে তাকান। তৌফিক ইসলাম আবারো জিজ্ঞেস করেন,..
“কী হলো? আছে?”
আরিফা বেগম কিছুক্ষন ভেবে বলেন,
0 Comments