লেখিকাঃ তাবাসসুম কথা
আমাকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে একটানে আমার শাড়ি খুলে দিলেন তুর্য ভাইয়া। তার এহেম কান্ডে আমি পুরোই বেকুব বনে গেছি। তবে তার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে লোকটা। চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে এখন আগুন ঝড়ে পরবে। তার এই অবস্থা দেখে আমার ভীষণ ভয় করছে কিন্তু না নিজেকে তার সামনে দুর্বল দেখানো যাবে না। আমি চোখে মুখে ক্রুদ্ধ ভাব এনে বললাম,
-- এভাবে আনার মানে কি আর এসব কি অসভ্যতামি? শাড়ি টেনে খুললেন কেনো?
-- তোর এই শাড়ি পড়ার কি দরকার ছিল? এমনেও সব দেখা যাচ্ছে। শুধু শুধু এই মশারি শরীরে নিয়ে ঘুরার কি প্রয়োজন!! মশারি টা থাকাও যেই কথা না থাকাও একই কথা!! সো খুলে দিলাম।
-- প্রথম কথা হলো এটা মশারি না, ডিজাইনার শাড়ি। আর দ্বিতীয়ত আমার যা ইচ্ছা আমি তা পড়বো আপনাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।
-- একশোবার বাধ্য তুই! তুই কোন সাহসে এই অর্ধনগ্ন অবস্থায় সবার সামনে গেলি। ইচ্ছা করছে তোকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেই।
-- এইতো বাছা লাইনে এসেছো!!
-- কি বিরবির করছিস? উত্তর দে। তুই এই শাড়ি পরে সবার সামনে কেনো গিয়েছিস! আর এগুলো কি এই ব্লাউজ?? এটা কোন ধরনের ব্লাউজ!! পুরো পিঠ বের হয়ে আছে!! সবাই তোকে এই অবস্থায় দেখলো এখন তুই খুশি তো!! কান খুলে শুনে রাখ হীর, তোর উপর একমাত্র অধিকার আমার। আর কেউ যদি তোর উপর নজরও দেয় তার চোখ আমি উপরে নেবো।
-- ইশশ আমার দরদ রে। আমি কি আপনার কেনা সম্পত্তি নাকি যে আমার উপর শুধু আপনার অধিকার? আমি হীর একটা মুক্ত পাখি। কেউ আমার উপর অধিকার খাটাতে পারবে না।
-- আর কেউ না পারলেও আমি পারবো। আমার পুরো অধিকার আছে তোর উপর।
-- কেনো কেনো?
-- কারণ তুই শুধু আমার। যতোদিন আমি বেঁচে আছি তুই আমার। আমাদের মৃত্যুর পরও তুই আমার। তুই আমার বুঝলি? (আমার চুলের মুঠি ধরে)
ভাইয়া আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকে তার সাথে মিশিয়ে কথা গুলো বলছেন। আমি তার চোখে রাগের পাশাপাশি আমার জন্য ভালোবাসাও দেখতে পাচ্ছি। হ্যাঁ এটাই আমি দেখতে চেয়েছিলাম। চুলের মুঠি ধরায় আমি ব্যথা পাচ্ছি কিন্তু এই ব্যথাটা আমার পাওয়ার সামনে কিছুই না। আমি তুর্যকে নিজের করে পেয়েছি।
ভাইয়ার হাত আমার ঘার থেকে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
-- আপনি কোন অধিকারে বলছেন আমি শুধু আপনার? আপনি তো আমাকে ভালোওবাসেন না। তাহলে কে দিয়েছে আপনাকে অধিকার এটা বলার যে আমি আপনার!!!
ভাইয়ার চোখ দিয়ে লাভা ঠিকই বের হচ্ছে কিন্তু আমার প্রশ্নে ভাইয়ার মুখ থেকে কথা সরছে না। সে এখনও চুপ করে আছে।
আমিই তার কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করে ফেলেছিলাম। সে হয়তো সত্যি আমাকে কখনও ভালোবাসেন নি। আমি ভাইয়াকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবো ঠিক তখন ভাইয়া আমার হাত টেনে ধরলেন। একটানে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে আমার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁট দিয়ে দখল করে নিলেন।
ভাইয়া এমন কিছু করবেন সেটা আমার চিন্তা ভাবনার বাইরে ছিল। ভাইয়ার আমার প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ায় এমনিতেই আমার মন খারাপ ছিল। তার ওপর তার এই কাজটায় আমার আরো বেশি রাগ হয়। তাকে নিজের কাছে থেকে সরানোর চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হলাম। তার শক্তির সাথে পারছি না, সে এতো শক্ত করে আমাকে ধরে রেখেছেন যে আমি নড়তেই পারছি না। কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার হাতের বাঁধন একটু আলগা হলেই তাকে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছে থেকে সরিয়ে দিলাম।
আচমকা ধাক্কা দেওয়া তুর্য নিজেকে সামলাতে না পেরে পরে যেতে নেয়। নিজেকে সামলে নিয়ে তুর্য হীরের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। হীর নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে না পেরে কেঁদে দেয়।
-- আপনি আমাকে কি মনে করেন!! আমি কি রক্তে মাংসে গড়া মানুষ নই? নাকি কোনো পুতুল!! যার সাথে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে খেলবেন!! আমার কি কোনো আত্ম-সম্মাণ নেই?? আপনার কাছে ভালোবাসা চাইতে গিয়েছিলাম। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আবার এসেছেন আমার ভাঙা মন জোরা লাগাতে? নাকি আমার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে? কি হলো চুপ করে আছেন কেনো? আপনি বলছেন আমার উপর আপনার অধিকার আছে, আমি শুধু আপনার। কিন্তু আমাকে ভালোবাসেন না। তবে কি আমাকে রক্ষিতা বানিয়ে রাখতে চান?? আরেহ আপনাকে ভালোবেসেছি আমি। আপনার জন্য আপনার রক্ষিতা হয়ে থাকতেও রাজী আছি। আমাকে ভোগ করতে চান তো! এই শরীর টাই সব! ঠিক আছে। এখন বাসায় কেউ নেই। এটাই মক্ষোম সুযোগ। আর আমিও প্রস্তুত। আপনার মনের সব বাসনা পূরণ করে নিন। আপনাকে ভালোবেসে জীবন দিতে পারবো, আর আত্ম-সম্মাণ বিসর্জন দিতে পারবো না!!
হীর ব্লাউজের হুকে হাত দিতে গেলেই তুর্য ঠাসস্ করে একটা চড় বসিয়ে দেয়ে হীরের গালে। হীর ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তুর্যর দিকে। তুর্যর চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।
-- তুই আমাকে এতোটা নিকৃষ্ট ভাবিস!! তুই ভাবলি কি করে যে আমি তোকে ভোগ করতে চাই!! তোকে ভোগই করার হলে আমার কাছে আরও অনেক সুযোগ ছিল। সেদিন ছাদে আমি চাইলেই তোকে কাছে টেনে নিতে পারতাম। নদীর তীরে তোকে আপন করে নিলে তুই নিজেও বাঁধা দিতি না। কিন্তু আমার তো এসব চাই না। আর কি বললি তুই,, রক্ষিতা করে রাখতে চাই!!! ভালোবাসি তোকে এই জিনিস টাই বুঝলি না শুধু। আর বাকি সব বুঝলি যেসবের কোনো অস্তিত্বই নেই।
-- আপনি আমাকে ভালোবাসেন না। আপনি নিজে মুখে বলেছেন।
-- সবসময় আমরা যা বলি বা শুনি সত্যি হয় না হীর। তোকে সারাজীবনের জন্য আপন করে পাওয়ার জন্য এমন হাজার টা মিথ্যা বলতে রাজি আমি। ৭ টা বছর ধরে তিলে তিলে মরছি আমি। শুধু এই অপেক্ষায় একদিন তোকে আমার করে নেবো।
-- মানে!!
-- তোকে অনেক ভালোবাসি হীর। তুই কলিজা আমার। এমন না যে এই ভালোবাসা আজকের। ৭ বছর ধরে ভালোবেসে আসছি তোকে। যখন থেকে ভালোবাসার মানে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে শুধু তোকেই ভালোবেসেছি।
-- কি বলছেন এসব! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
-- তুই তো কিছুই বুঝিস না। কি আর বলবো!
-- প্লিজ বলুন। ৭ বছর আগে তো আপনি লন্ডন চলে গিয়েছিলেন। তাহলে এসব কি বলছেন!!
-- লন্ডন ইচ্ছে করে যাই নি, জোর করে পাঠিয়েছিল আম্মু। তোর কাছে থেকে আমাকে দূরে সরানোর জন্য নিজের আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে জোর করে পাঠিয়েছিল আমাকে।
-- কিহ! কিন্তু কেনো?
একই বাসায় থাকার সুবাদে তুর্য আর হীর ছোট বেলা থেকেই এক সাথে থাকতো। পুরো বাড়িতে হীরের সবচেয়ে পছন্দের মানুষ ছিল তুর্য। তুর্যও হীরকে জীবন দিয়ে আদর করতো। হীরের সব ইচ্ছা সব আবদার যথাসম্ভব পূরণ করতো। ছোট বেলা থেকেই হীরের প্রতি যত্ন নেওয়া, আদর করা, পজেসিভনেস গুলো কখন যে তুর্যর মনে ভালোবাসার রূপ নেয় সে নিজেও বুঝতে পারে না।
একটা দশ বছরের বাচ্চা মেয়ের জন্য তার মনে এই ধরনের অনুভূতি হওয়া অন্যায়। কিন্তু সে অসহায়। শত চেষ্টা করেও হীরকে সে তার মন থেকে দূর করতে পারে না। হীরকে সবসময় চোখের সামনে দেখার একটা নেশা ধরে যায় তুর্যর। হীরকে নিজে প্রতিদিন স্কুলে দিয়ে আসা। অবসর সময়ে হীরের সাথে পুতুল খেলা যেনো তুর্যর রুটিন হয়ে যায়। এতে করে তুর্যর পড়ালেখার ক্ষতি হতে শুরু করে যেটা তমা বেগমের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাড়ায়।
একদিন তুর্য তার ঘরে বসে গিটার বাজাচ্ছিল। তখন হীর কাঁদতে কাঁদতে সেখানে যায়। হীরের চোখে পানি দেখেই বুকটা মুচরে উঠে তুর্যর। বিচলিত হয়ে জানতে চাইলে হীর ফুপাতে ফুপাতে সব খুলে বলে। সব শুনে তুর্যর মাথায় রক্ত উঠে যায়। ঘটনা টা ছিল এমন যে, "হীর নিলি-মিলির সাথে বউ বউ খেলছিল। রুহান এসে খেলায় যোগ দেয় যদিও হীর রুহানকে পছন্দ করে না। তবুও সেদিন খেলায় নিয়েছিল। খেলার ছলে রুহান হীরকে অন্যায়ভাবে টাচ করলে হীর সেখান থেকে উঠে চলে যায়। আর স্বভাবতই তুর্যর সাথে ক্লোজনেস বেশি থাকায় পুরো ঘটনাটা তুর্যকে জানায়।"
তুর্য নিজের রাগ সংবরণ করতে না পেরে হন্তদন্ত হয়ে রুহানের কাছে গিয়ে বেধরক পেটানো শুরু করে। তুর্যর এভাবে মারপিট দেখে বাড়ির সবাই জরো হয়ে যায় সেখানে। তুর্য মা তমা বেগম আর তুর্যর ফুপি আম্মু অনেচ চেষ্টা করেও রুহানকে তুর্যর হাত থেকে ছাড়াতে পারে না। পরে তুর্যর বাবা সেখানে গিয়ে তুর্যকে থামায়।
তুর্যর এই কাজের জন্য কোনো যাচাই বাছাই করা ছাড়াই আমজাদ সাহেব তুর্যকে থাপ্পড় মারেন। এতে তুর্যর রাগ কমার বদলে আরো বেড়ে যায়। রুহানের আম্মু রুহানকে ধরে কান্না কাটি শুরু করে দেয়। মার খেয়ে রুহানের অবস্থা শোচনীয়, নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। রুহানের বাবা রুহানকে নিয়ে হসপিটালে চলে যান।
এদিকে ছেলের এতো অধঃপতন দেখে হায়-হুতাশ শুরু করে দিয়েছেন তমা বেগম। বাড়ির সবাই তুর্যর এই ব্যবহারে আশ্চর্য, যেই ছেলে মাথা উঁচু করে কারো সাথে কথা বলে না সে কি না নিজের ফুফাতো ভাইকে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছে!! আমজাদ সাহেব তুর্যর কাছে গিয়ে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
-- এসবের মানে কি তুর্য! তুমি তো এতো উশৃঙ্খল ছিলে না। তাহলে আজ কি এমন দরকার পরেছিল যার জন্য এই ব্যবহার করেছো!
তমা বেগম অপর পাশ থেকে হায়-হায় করেই যাচ্ছেন। এমনিতেই রুহানের কুকর্মের জন্য তুর্যর মাথায় আগুন ধরে আছে তার উপর বাবার দেওয়া থাপ্পড় টা যেনো আগুনে ঘি এর কাজ করেছে। তুর্য চোখে মুখে আগুনের ফুলকি নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-- হীরের দিকে কেউ নজর দিলে তার চোখ উপরে নিতে পারি আমি আর সেই জায়গায় রুহান তো হীরের গায়ে হাত দিয়েছে। এতো সহজে কিভাবে ছেড়ে দিতাম ওই জানোয়ারটাকে।
তমা বেগম পিছন থেকে হতবাক হয়ে হুঙ্কার করে বলতে শুরু করেন,
-- কি বললি তুই তুর্য! হীর! হীরের জন্য তুই রুহানকে মেরেছিস! এই এতোটুকুন মেয়ে তোকে কি কান পড়া দিলো যার জন্য আমার সোনার টুকরো ছেলের এতো অধঃপতন হলো।
হীর একটা টেডি বিয়ারকে শক্ত করে ধরে ঘরের এক কোনায় ভয়ে জরোসরো হয়ে দাড়িয়ে ছিল। তমা বেগম হীরের একহাত ধরে টেনে এনে সবার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। হীর এমনিতেই ভয় পেয়েছিল তার উপর তমা বেগমের জেরা করায় ভয়ে কান্না করে দেয়। হীরের কান্না দেখে তুর্য আবারো বিচলিত হয়ে উঠে।
-- মা! এমন করছো কেনো হীরের সাথে! ওর কোনো দোষ নেই। যা দোষ রুহানের আর যা অন্যায় করার আমি করেছি।
-- বাহ তুর্য তুই তো এখন বড়দের মুখে মুখে তর্ক করাও শিখে গেছিস। তা তোর কিসের এতো দরদ উতলে উঠলো এই হীরের প্রতি যে রুহানকে এমন ভাবে মারলি। কাকলি (রুহানের মা) কে দেখ! কি অবস্থা হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। কেনো করলি তুই এসব?
-- মা, রুহান হীরের সাথে যা করেছে তার শাস্তি আরো ভয়ংকর হওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমি পারি নি।
-- তুই বড্ড বেশি বারাবারি করছিস তুর্য। এক হীরের জন্য তুই আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করতে চাস তোর ফুপির সাথে?
-- হীরের জন্য আমি দুনিয়াতে আগুন লাগানোর আগেও দ্বিতীয়বার ভাববো না।
-- কি বললি তুই? হীরের জন্য এতো দরদ কিসের তোর তুর্য? ভুলে যাস না হীর তোর আপন বোনও নয়। চাচাতো বোন মাত্র। হিয়া আর নিলি-মিলির মতোই হীর।
-- হীর আমার জন্য সবকিছু মা! আমি ভালোবাসি হীরকে। আর আমার ভালোবাসার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।
ঠাসস্ করে একটা থাপ্পড় মারলেন তমা বেগম তুর্য গালে। বাড়ির সবাই অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে তুর্যর কথা শুনে।
-- কি বললি তুই? হীরকে ভালোবাসিস!! পাগল হয়ে গেছিস তুই তুর্য। হীর,,, তুই কি দুনিয়াতে আর মেয়ে পেলি না!!! এখন বুঝতে পারছি। দোষ আমার ছেলের না। আমার ছেলেকে আমি চিনি। এই হীরই আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ এতোটুকুন মেয়ে কি না এতো পেঁকে গেছে। এখন থেকেই ছেলেদের ফাঁসানো শিখে গেছে না জানি ভবিষ্যতে কোন কলঙ্ক লাগাবে বংশের মুখে।
-- মা এসব কি বলছো তুমি! হীরকে আমি ভালোবেসেছি এতে ওর দোষটা কোথায়। এতোটুক বাচ্চা মেয়েকে এসব বলতে লাগছে না তোমার।
-- বাহ রে এখন নিজের মাকে চটাং চটাং উত্তর দেওয়া শিখে গেছো এই মেয়ের জন্য।
তমা বেগম আর তুর্য আরো কিছুক্ষণ কথা কাটা-কাটি হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে তমা বেগম হীরকে দোষারোপ করে হীরের গালে চড় মারে। চড়ের মাত্রা সইতে না পেরে হীর মেঝেতে ছিটকে পরে। যার ফলে হীরের মাথা ফেঁটে যায় খানিকটা। হীরের মা দৌড়ে এসে মেয়েকে ধরে সেখান থেকে নিয়ে যায়।
সেদিনকার মতো বিষয়টা শেষ হলেও এই একটা ঘটনার রেশ ধরে পুরো পরিবারে ফাটল ধরে। তমা বেগম আর হাফসা (হীরের মা) এর মধ্যে সম্পর্ক প্রায় শেষ হয়ে যায়। তুর্য আর হীরের বাবার জন্য তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও নিজেদের মধ্যে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে নেয়। আর তমা ও হাফসা দুজনের মতেই তাদের পরিবারে ফাটলের কারণ হীর।
এদিকে সেদিনের পর থেকে তুর্যকে আর হীরের আশেপাশেও যেতে দেয় নি তমা আর হাফসা। দুজনেই এক পরিবারের বাচ্চা এজন্য কোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। কিন্তু তুর্যর অবস্থা পাগল প্রায়। হীরকে না দেখে থাকা তার কাছে ভীষণ কষ্টের। তুর্য তমা বেগমের পায়ে ধরে পর্যন্ত মিনতি করেছে হীরের সাথে দেখা করতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তমা বেগম জেদ ধরে বসে আছেন কিছুতেই হাফসার মেয়ের সাথে তার ছেলেকে মিশতে দেবেন না। তুর্য আর কোনো উপায় না পেয়ে রাতে অন্ধকারে লুকিয়ে হীরের ঘরে যায় হীরকে দেখতে।
অন্ধকারে ছায়ামূর্তি দেখে ভয় পেয়ে হীর চিতকার করতেই বাড়ির সবাই সেখানে জরো হয়ে যায়। হীরের প্রতি তুর্যর টান দেখে তমা বেগমের পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। তাই তারপরের দিনই নিজের আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে জোর করে তুর্যকে লন্ডন পাঠিয়ে দেয়। মোট কথা হীরের কাছে থেকে দূর করে। তার বিশ্বাস ছিল এই বয়ঃসন্ধিকালের আবেগ কিছুদিন দূরে থাকলেই কেটে যাবে। ৭ বছরে একবারও তুর্যকে বাড়ি ফিরতে দেয় নি তমা। তাফসির বিয়ের জন্য এক প্রকার জোর করেই রাজি হয়েছে তুর্যকে আসতে দিতে।
বর্তমান,,
দুচোখ দিয়ে অঝোড় ধারায় পানি পরছে হীরের। সে ভাবতেই পারছে না তার জন্য একটা মানুষ এতোটা কষ্ট সহ্য করেছে। এতোটা অপমানিত হয়েছে তুর্য তার জন্য। তবুও তাকে ভালোবাসা ছাড়ে নি। তুর্যকে জরিয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠলো হীর। কতো ভুল বুঝেছে সে তুর্যকে। তার ভালোবাসার যোগ্য না সে।
-- কাঁদছিস কেনো?
-- আমার জন্য আপনার অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না! আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন। আমি আপনাকে ভুল বুঝেছি। প্লিজ মাফ করে দিন।
-- হুশ! এসব কি বলিস। তুই জানিস তুই আমার কলিজা। তোর জন্য আমি সব করতে পারি। কারণ তোকে আমি ভালোবাসি। আর এতোদিন যে তোকে এতো অবহেলা করেছি সেটা শুধু আম্মুকে দেখানোর জন্য। কারণ তারা কেউ যদি জানতে পারে আমি এখনও তোকে ভালোবাসি, আমাদের আবারো আলাদা করে দেবে।
-- আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি। কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না। কখনই না।
·
0 Comments