লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা
আজ ভার্সিটিতে যায় নি মোহ। আজ সারাদিন ঘুমাবে সে। এই ইচ্ছা পোষণ করে সে চোখ বন্ধ করে। কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের ভিতর উষ্ণের মুখমণ্ডল ভেসে ওঠে। মোহ তা দেখে অবাক হওয়ার বদলে ফিক করে হেসে ফেলে। এতো নাদান না সে, যে কিছুই বুঝবে না। উষ্ণের সঙ্গে বেশি ভালো সম্পর্ক হওয়ায় বেশির ভাগ সময়ই উষ্ণের সাথে কথা বলে অথবা দেখা করে কাটে মোহ'র। শেক্সপিয়ার একবার বলেছিল, একজন নারী আর একজন পুরুষ কখনো বন্ধু হতে পারে না। একটা সময় তাদের ভিতরে প্রেমময় অনুভুতি সৃষ্টি হবেই। ঠিক সেটাই ঘটেছে উষ্ণ ও মোহ'র সাথে। বেশি ভালো সম্পর্ক হওয়ায় আস্তে আস্তে তাদের একে অপরের প্রতি প্রেম সৃষ্টি হচ্ছে। তবে উষ্ণের অনুভুতি আগেই ছিল। সব কিছুই জানে মোহ। তবে ভয় হয়, উষ্ণ যদি প্রহরের মতো করে তার সাথে ছলনা করে। এমনিতেই প্রহরের ঘটনার পর আর কাউকে বিশ্বাস করতে মন চায় না। এখন উষ্ণ প্রতারণা করলে মোহ নিজেকেও মারবে আবার উষ্ণ আর প্রহর কেও মারবে। আপাতত তার চিন্তা এটাই।
পাশে থাকা ফোন টা ভাইব্রেট করে ওঠে। হয়তো নোটিফিকেশন এসেছে। ফোন টা উঁচিয়ে ধরতেই মোহ দেখে, উষ্ণ মেসেজ দিয়েছে। মোহ আর উষ্ণের বন্ধুত্বের প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। আর কয়েক মাস পর উষ্ণের মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে।
আবারো ফোন টা ভাইব্রেট করে ওঠে। মোহ মেসেজ গুলো পড়ে। কিন্তু মেসেজ গুলো পড়ার পর মোহ'র মুখ টা বাঙলার পাঁচের মতো হয়ে যায়। উষ্ণ লিখেছে, "আজ একটা গুনধর ছেলে তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল। আমি বলেছি, আমি মোহ নামক এক মর্জিনা পাগল কে চিনি। আর কাউকে না। ঠিক বলেছি না?"
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মোহ। উষ্ণ কে দেখে কখনই তার এতো রসিক মনে হয় নি। মোহ'র সাথে কথা বলতে গেলেই শুধু রসিকতা করে। মোহ'র মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে উষ্ণ কে সব কিছু বলতে। কিন্তু সাহস পায় না। উষ্ণ ও যদি প্রতারণা করে। তার জীবন উষ্ণ, শাওন ও প্রভা আসার পর থেকে যেন প্রহরের কথা মনে পড়ে না। প্রহর ছেলেটাও এখন অন্যরকম হয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে, আগের থেকে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে তাকে দেখে খারাপ লাগে মোহ'র। প্রহরকে তো একসময় মন দিয়েছিল সে।
___TikTok
সামনে তটিনীর পরীক্ষা। এজন্য প্রতিদিনই উষ্ণ কে যেতে হয় তটিনী কে পড়াতে। তটিনী এখন উষ্ণের জন্য আগের মতো পাগলামি করে না। সে বুঝে গেছে, উষ্ণ তাকে ছাত্রী হিসাবেই দেখে আর তার মনে অন্য কেউ আছে। আবেগ টাকে বুকে চাপা দিয়ে রাখে সে। এই ছয় মাসে যেন উষ্ণের প্রতি তটিনীর আবেগ টা যেন আরও প্রকট রুপ ধারণ করেছে। যাকে কবিদের ভাষায় বলা হয় 'প্রেম..। মাঝে মাঝে উষ্ণের উষ্ণতার চাদরে ঢেকে যেতে ইচ্ছা করে।
- "কী ভাবছো তটিনী?"
তটিনী চমকায় না। সবসময়ের মতো গম্ভীর মুখে উত্তর দেয়,
- "কিছু না স্যার।'
উষ্ণ অবাক হয় না। তটিনী এমনই হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো হাসে না। বান্ধবীদের সাতগে ঘুরতে যায় না। তার জন্য পাগলামি করে না..। হ্যাঁ, সে জানতো..। সে জানতো তটিনী তাকে পছন্দ করে। কিন্তু সে তার ছাত্রী, আর সে তার বোন কে ভালোবাসে। এখানে কীভাবে সে তটিনীর এমন অনুভুতি কে প্রশ্রয় দিতে পারে? এই মেয়েটা কে সে সবসময়ই বোনের চোখে দেখেছে। আর এখনো দেখে।
- " তটিনী?.
বিরস মুখে জবাব দেয় তটিনী,
- "হুম..
- " তোমার না একটা বোন ছিল? সে কোথায় এখন?"
উষ্ণের কথায় তটিনীর বুক টা ভেঙে যেতে থাকে। আজ এতদিন পর আবারো তার আপার কথা মনে পড়লো..। কৈশোরের প্রথম অনুভুতি তার আপার জন্য ছিল। বোনের থেকে মায়ের চোখে বেশি দেখতো সে। সে যেন কোথায় হারিয়ে গেল..। আর ফিরে এলো না..। যেন রুপকথার রাক্ষসী এক রাজকন্যা কে খেয়ে ফেলেছে।
তটিনী কে চুপ থাকতে দেখে উষ্ণ হেসে বলে,
- " আমাকে বন্ধুর মতো ভাবতে পারো।"
টলমলে চোখ নিয়ে উষ্ণের পানে তাকায় তটিনী। চোখের গহীনে ছিল হাজারো না বলা কথা। যা অশ্রুর মাধ্যমে প্রকাশের চেষ্টা করছে।
উষ্ণ আবারো বলে,
- "কী হয়েছে তোমার? আজকাল এতো গম্ভীর থাকো কেন? এভাবে থাকলে তো তোমার মানষিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
উষ্ণের এমন যত্নশীল কথা শুনে তটিনী হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। তার বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা অনুভুতি যেন আবার জেগে উঠেছে..। তটিনী আর সহ্য না করতে পেরে বলে,
- "স্যার, আমা- আমাকে একটু শা- শান্তি দিন প্লিজ..
উষ্ণ তটিনীর কথার মানে বুঝতে পারে। এই ছলনার জগতে তটিনীর এটুকু অনুভুতি নেহাতই অবিশ্বাস যোগ্য। যদিও এটা কৈশোরের এক অস্থায়ী পুষ্পরঞ্জিত অনুভুতি...
উষ্ণ তটিনীর মাথায় হাত রাখে। যদিও সেটা ছোট বোন ভেবেই..
- " আমার কাছে তোমার মনের সব কথা বলতে পারো তটিনী..। তোমার মন টা হালকা হবে।"
তটিনী উষ্ণের পানে তাকায়। ইতস্তত না করে বলতে থাকে,
- "জানেন? আমার আপা আমাকে রেখে চলে গেছে..। ওই জা*নো*য়ার টার জন্য। ওই জা*নো*য়ার টা আমার আপার গায়ে কলঙ্ক লাগিয়ে দিয়েছে। আপাকে কেউ ভালোবাসে না। সবাই দুরছাই করে। বাবার জন্য আপা এই বাড়ি থেকে চলে যায়। আর যখন ফিরে আসতে চাইলো তখনও বাবা তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিল না। আমার মোহ আপা আমাদের ছেড়ে ওইযে চলে গেল..আর ফিরে এলো না।
0 Comments