Ad Code

প্রেমবাণী (সিজন ১) পর্ব ৫

লেখিকাঃ ফাতেহাতুন নিলা

পরের জন্মে একটি রঙিন প্রজাপতি হয়ে আসব,,

তপ্ত দুপুরে আপনার পিছু পিছু উড়ে বেড়াব,,
তবুও আপনার পিছু ছাড়ব না,,
হয়তো আমায় বলবেন," তুমি বেহায়া ",,
উত্তরে আমার একটিই বাণী,"আপনার জন্যইতো",,!!!
মেহরাব ভাই তখন কি পারবেন আমাকে দূরে ঠেলে দিতে? হয়তো না।আপনাকে যদি এই জন্মে না পাই তাহলে পরের জন্মে প্রজাপতি হয়েই আপনার পিছু নিব।তবু্ও পিছু ছাড়ব না আপনার।তখন তো ঠিকি আমাকে আপনার হাতের মধ্যে নিবেন।রঙিন প্রজাপতি রুপে আমাকে দেখে মুগ্ধ হবেন। আপনার পাশে রাখবেন। যদিও এটা গল্পের মতো হবে তখন। বাস্তবতার সাথে মিল নাও থাকতে পারে।আচ্ছা এই গল্পটা যদি পূর্ণতা পায় কেমন হবে তখন?
নিদ্রিতা যখন আনমনে কথাগুলো ভেবে রাস্তা দিয়ে হাটছিল তখনই নিদ্রিতার পিছনে শব্দ করে একটি গাড়ী থামে।ঠিক ভাবে যদি গাড়ী চালকটি গাড়ীটি না থামাতে পারত তাহলে হয়তো এই গাড়ীটি নিদ্রিতার ওপর দিয়ে যেত।গাড়ি থামানোর শব্দে নিদ্রিতা তড়িঘড়ি করে একপাশ গিয়ে দাঁড়ায়। গাড়ির দরজা ঠেলে বাহিরে বেড়িয়ে আসে একজন যুবক।শ্যমবর্ণ পুরুষটি। মাথার হালকা বড় কালো কচকচে চুলগুলো পিছনের দিকে ফেরানো। পড়নে ব্লু কালার শার্ট।হাতে ঘড়ি। কালো পেন্ট,কালো সুজ।
~ হেই মিস, আর ইউ ওকে?
~ হ্যাঁ
~এই ভাবে আনমনে কেও রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে? কখন থেকে গাড়ির হর্ণ বাজাচ্ছি। কিন্তু আপানর কোন হুঁশ নেই।আরেকটু হলেতো এক্সিডেন হতো।ভাগ্য ভালো ঠিক মতে পেরেছিলাম।
~ দুঃখিত।
~ ইটস ওকে।নেক্সট টাইম সাবধানে চলাফেরা করবেন। নয়তো বিপদ হতে পারে। ওয়েট আপানাকে আমি চিনি। আপনি মেহরাবের বোন মানে মেহরাবের ফুপির মেয়ে রাইট।
~ হুম
~ আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেননি। আমি সাইফ। আদ্রিয়ান সাইফ।মেহরাবের খালাতো ভাই। আই হোপ এখন চিনতে পেরেছেন।
~ হুম।
~ আপনি এত হুম হুম করেন কেন? আমি এতগুলো কথা বললাম তার বিনিময়ে আপনার কাছ থেকে শুধু " হুম, হুম" উওর পেলাম।সাধারণত মেয়েদের দেখি অনেক কথা বলে কিন্তু আপনি চুপ। যাইহোক, কোথায় যাচ্ছিলেন?
~ জ্বি, বাড়িতে যাচ্ছি।
~ আমিও খালামুনিদের বাড়িতে যাচ্ছি। চলুন একসাথে যায়।
~ সমস্যা নেই। আমি একা যেতে পারব। আপনি যান।
~ আপনি কি কোনো ভাবে আমাকে বিরক্ত ভাবছেন মিস নিদ্রিতা?
~ না, তেমন কিছু না।
~ তাহলে। আমাদের দুজনের গন্তব্য একি যায়গায়। রাস্তা একি দিকে। আমি এত করে বলার পরেও আপনি যেতে চাচ্ছেন না যে।
~ আসলে, আমার একটু কাজ ছিল বাহিরে।
~ সমস্যা নেই, আপনার কাজ শেষ হলে একসাথে যাব।এখন গাড়িতে উঠেন। কোথায় যাবেন জায়গার নাম বলেন। আমি নিয়ে যাচ্ছি।
দুইজনের কথোপকথনের মাঝেই মেহরাবের গাড়ি এসে থামে।
~ এখানে কি করছ তোমরা?
~ কিছু না জিদান ভাইয়া। তোমাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তোমরা দুজন কোথায় যাচ্ছ? বলে ওঠে সাইফ।
~ ওই যে একটু আশেপাশে ঘুরতে যাব তারপর রেস্টুরেন্টে যাব। তোমরাও আমাদের সাথে আসো মজা হবে।
গাড়ির ভিতর থেকেই কথাগুলো বলে সায়ান।
~ জিদান ভাইদের সাথে কি তুমি যাবে নিদ্রিতা?তোমার তো একটু কাজ ছিল।ভাইয়া...
সাইফকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে মেহরাব বলে ওঠল, ' যাবে ও আমাদের সাথে '।
মেহরাবের কথায় নিদ্রিতা মাথা তুলে তাকায় তার দিকে।কিন্তু মেহরাবের চোখের চাহনি দেখে মাথা নামিয়ে নেই পুনরায়। মিনমিন করে বলে,
~আপনার সাথে নিয়ে কি আমাকে কষ্ট দিতে চান মেহরাব ভাই?
নিদ্রিতার এই মিনমিন কথা বুঝতে না পেরে গাড়ি থেকে বের হতে হতে সায়ান জিজ্ঞেস করে,
~ কি বলেছ নিদ্রিতা কিছুই শুনতে পাইনি।
~ আমি আপনাদের সাথে যেতে পারব না এখন সায়ান ভাইয়া।
নিদ্রিতার উওরে সায়ান পুনরায় প্রশ্ন করে, ' কেন? '
সায়ানের প্রশ্নে যখন নিদ্রিতা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি এতক্ষণ চুপ করে থাকা শ্রেয়া বলে ওঠে,
~ ওরা না যেতে চাইলে না যাবে এত সাধার কি আছে? আমাদের দেরি হচ্ছে কিন্তু।
উপস্থিত থাকা মেহরাব আর সায়ান বিরক্ত চুখে তাকাই শ্রেয়ার দিকে। ধমকে বলে ওঠে মেহরাব,
~ তোমাকে এত কথা বলতে কে বলেছে শ্রেয়া?আমি যখন একবার বলেছি নিদ্রিতা যাবে মানে যাবে। আর এই যে তুমি ( নিদ্রিতার দিকে আঙুল তাক করে) কি এমন কাজ আছে এখন যেতে পারবে না?
~ আসলে, আমি মেঘলার জন্য অপেক্ষা করছিলাম এখানে।ও আসবে তাই।
মেঘলাকে চিনতে না পেরে সায়ান বলে,
~ এই মেঘলা টা কে?
~ আমি।
হুট করে মেয়েলি কন্ঠে ' আমি ' শব্দটা শুনে পিছনে তাকায় সবাই। তাদের থেকে হাত দুই হাত দূরে দাড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।
~ এই তুমি ওই সকালের মেয়েটা না। আমাকে পাগল বলেছিলে।
সায়ানের কথায় চোখ মুখ বিরক্তি করে বলে,
~ হ্যাঁ
~ তোমার তো এই সময়ে কলেজ থাকার কথা। তার মানে আমি যেটা বলেছিলাম এটাই হলো।মেহরাব সকালে যে তোকে একটা ঝগরুটে মেয়ের কথা বলেছিলাম মনে আছে।এটাই সেই মেয়ে।
সায়ানের কথার মেঘলা রেগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে,
~ দেখুন আপনি...
মেঘলার সম্পূর্ণ কথা শেষ না করতে দিয়ে সায়ান পুনরায় বলে,
~ দেখানোর কি কিছু আছে নাকি মিস,কি যেন নাম তোমার? মনে পড়েছে মেঘলা।
এদিকে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ধমকে মেহরাব বলে ওঠে,
~ চুপ করো সবাই। সবাই যখন উপস্থিত এখানে। গাড়িতে উঠ এবার।
মেহরাবের কথায় সবাই গাড়িতে যখন উঠতে যাবে তখনি সায়ান বলে,
~ নিদ্রিতা তুমি মেহরাবের গাড়িতে সামনের সিটে বসো।মেঘলা তুমি পেছনে শ্রেয়ার সাথে বসো।আমরা ঘুরতে যাব। মেহরাব তুই তোর মামাতো, খালাতো বোনদের কে নিয়ে যা।আমি ছোট ভাই সাইফ এর সাথে যাচ্ছি।
কথাটি বলেই একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে সায়ান সাইফ এর কাছে যায়।
এদিকে সাইফ বলে, ' কিন্তু আমি তো নিদ্রিতার সাথে যেতে চাইছিলাম। '
~ আরে ছোট ভাই মেহরাবকে দেও ও ওর বোনদের নিয়ে যাক। এদিকে তুমি আর আমি মজা করতে করতে যাব।ওঠ ওঠ তাড়াতাড়ি।
বলেই সাইফকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে পড়ে সায়ান।
এদিকে মেহরাবও গাড়িতে ওঠে পড়ে।গাড়িতে ওঠেই মেহরাব নিদ্রিতার দিকে এগিয়ে যায় সিট বেইল লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। এদিকে মেহরাবের এত কাছে আসা দেখে নিদ্রিতা ভয়ে গুটিয়ে যায়। নিদ্রিতার গুটিয়ে যাওয়া দেখে মেহরাব ফিসফিসিয়ে বলে,
~ সিটবেইল যে লাগাতে হয় এটা দেখছি ভুলে গেছ।নাকি আমি লাগিয়ে দিব বলে ইচ্ছে করে লাগাও নি।মেহরাবের এমন ফিসফিস কথা শুনে নিদ্রিতা বার বার কেপে কেপে ওঠে। তা দেখে মেহরাব আবার বলা শুরু করে, এমন কিছুই করিনি যে এভাবে গুটিয়ে নিতে হবে আর কেঁপে কেঁপে ওঠতে হবে।এত ভয় পাও আবার সারাদিন ভালোবাসি ভালোবাসি তাজবি জপো কেমনে? হুম।
কথাটি বলেই মেহরাব তার জায়গায় ঠিক হয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।এদিকে মেহরাবের কাজ দেখে পিছন থেকে শ্রেয়া ক্রোধে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে।শ্রেয়ার এই কর্মকান্ড কেও না দেখলেও মেঘলা ঠিকি দেখে নেই।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu